শালবন বিহারে পর্যটক বাড়লেও নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা

শালবন বৌদ্ধ বিহারে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থীরাবাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে শালবন বৌদ্ধ বিহার অন্যতম। দেশের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন এটি। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে এর অবস্থান।

শালবন বিহারের পাশে রয়েছে ময়নামতি জাদুঘর ও নব শালবন বৌদ্ধ মন্দির। এছাড়া পর্যটন এলাকা কোটবাড়িতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া, আনন্দ বিহারসহ বিভিন্ন স্থান বেশ দর্শনীয়।

এসব জায়গায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক ঘুরতে আসেন। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে। তবে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। স্থানীয়দের মন্তব্য, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে আশপাশের বিভিন্ন পার্ক ও রিসোর্টের দিকে ঝুঁকছেন পর্যটকরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে কোটবাড়িতে প্রবেশের রাস্তা সরু হওয়ায় বড় আকারের গাড়িগুলো একসঙ্গে চলতে পারছে না। এছাড়া নেই গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। এ কারণে রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটকরা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।

শালবন বৌদ্ধ বিহার এলাকায় পর্যটকদের জন্য অবকাঠোমোগত পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। কুমিল্লা শহরে দুই-তিনটি ভালো মানের হোটেল থাকলেও কোটবাড়ি ও শালবন বিহার এলাকায় সেই সুবিধা নেই। এছাড়া নেই গণশৌচাগার ও বসার মতো ছাউনি। এসব স্থানে দুই-একটি খাবারের হোটেল থাকলেও তা মানসম্মত নয়। নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে এসব হোটেলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের অভিযোগ আছে।

টাঙ্গাইল থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা হোসেন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক স্থানটি ঘুরে দেখতে অনেক দূর থেকে এসেছি। কিন্তু এখানকার পর্যটনের পরিবেশ দেখে হতাশ হলাম। ভালো একটি হোটেল খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে প্রখর রোদে একটু বিশ্রাম নেওয়ার কোনও জায়গা বা ওয়াশরুম খুঁজে পেলাম না।’

অন্যদিকে কোটবাড়ি-শালবন এলাকায় পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। সেখানে বখাটেদের দৌরাত্ম্য। পাশাপাশি অটো-সিএনজি চালকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ পর্যটকদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে।

যদিও কুমিল্লা ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক জীবন চন্দ্র হাজারী মনে করেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বর্তমানে বেশ সন্তোষজনক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমাদের ভ্রাম্যমাণ টিম সবসময় তৎপর থাকে।’

ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. হাফিজুর রহমানের মতে, ‘আগে একসময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখা যেতো। বর্তমানে নিরাপত্তার দিক দিয়ে আমরা অনেক তৎপর। এখানে ২০ জন সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন আনসারের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে। তারা সার্বিক নিরাপত্তা দিচ্ছেন।’

শালবন বৌদ্ধ বিহারের সামনে দর্শনার্থীরাকাস্টোডিয়ান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দিনে দিনে দেশীয় পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশি দর্শনার্থীদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৯৩ জন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে ১ হাজার ৬৭ জনে নেমে এসেছে।

বিদেশি পর্যটক কমে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে? কাস্টোডিয়ানের উত্তর, ‘আমাদের এখানে অবকাঠামোগত বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নেই, তাই বিদেশি দর্শনার্থী কম। আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে ৫০টি রুমসহ একটি রিসোর্ট নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছি। ’

প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘একসময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর শালবন বিহারকে শুধু সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করার দিকে মনোযোগী ছিল। তবে বর্তমানে অনেকে এসব ঐতিহাসিক স্থান দেখতে আসে। শালবন বিহার বাদে আশেপাশে আরও ছয়-সাতটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে। এসব নিয়ে কুমিল্লায় প্রত্নতত্ত্ব জোন তৈরি করা হবে। যাতে পর্যটকরা সহজে স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারে। আশা করছি, আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে সবকিছুর সমাধান হবে।’

ছবি: লেখক