সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে সৈকত। তবে পর্যটনের বিকাশে প্রকৃতি ও পরিবেশ কতটা বিনষ্ট হয়েছে তা টের পাওয়া যাচ্ছে এখন। দালান নির্মাণ, যত্রতত্র বর্জ্য ফেলাসহ বিভিন্ন কারণে জীববৈচিত্র্য হারাতে বসেছিল। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লেও একদিক দিয়ে পরিবেশের জন্য তা ইতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সৈকতজুড়ে গোলাপি-অতিবেগুণি রঙের ফুলে ভরা সাগরলতা জন্মেছে। পরিবেশবিদ ও সাংবাদিক বিশ্বজিত সেন বাঞ্চুর কথায়, ‘একদশক আগে এমন সৌন্দর্যময় পরিবেশ ছিল। গত দশ বছরে প্রকৃতির এমন রূপ দেখা যায়নি এখানে। যদিও এগুলোই কক্সবাজার ভ্রমণে পর্যটকদের কাছে ছিল অন্যরকম আকর্ষণ। কিন্তু মানুষের অবাধ বিচরণের কারণে সাগরলতা হারিয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে বালিয়াড়ির।’
স্থানীয় সাংবাদিক আহমদ গিয়াসের মতে, ‘পরিবেশবিদ্যায় বালিয়াড়িকে উপকূলের রক্ষাকবচ আর সাগরলতাকে বালিয়াড়ি তৈরির কারিগর ভাবা হয়। সাগরে ঝড়-তুফান বা ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ঠেকিয়ে উপকূলকে রক্ষা করে বালিয়াড়ি। আর মাটির ক্ষয়রোধসহ শুকনো উড়ন্ত বালুরাশিকে আটকে বালিয়াড়ি সাজায় সাগরলতা। তাই বলা যায়, সৈকতের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে সাগরলতার ভূমিকা অপরিসীম।’
ডলফিন প্রসঙ্গে এই গবেষকের মন্তব্য, ‘বঙ্গোপসাগরে এই প্রাণীর উপস্থিতি খুব কমসংখ্যক। এর মধ্যে দুটি ডলফিন পরিবার কক্সবাজারের সোনাদিয়া ও মহেশখালীর কাছাকাছি অবস্থান করে থাকে। সাগরে মূলত তারা দলবেঁধে চলাফেরা করে। বর্তমানে চ্যানেলগুলোতে প্রতিনিয়ত তাদের দেখা মেলে। ডলফিন নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে, তাই এখন জনমানবহীন নির্জনতায় সাগরতীরের কাছাকাছি চলে আসে তারা।’
জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন, কক্সবাজার শহরের দরিয়ানগর থেকে দক্ষিণে এক কিলোমিটার পর্যন্ত সৈকতকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সাগরলতার বনায়ন করা হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বালিয়াড়ির পেছনের অংশে সৃজন করা হবে নারিকেল বাগান।