খাগড়াছড়ি ও সাজেকের পর্যটন স্থবির

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকাকরোনাভাইরাস মহামারির কারণে খাগড়াছড়িতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতেও জেলায় পর্যটক সমাগম নেই। কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন এখানকার আবাসিক হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় মাথায় হাত হোটেল ব্যবসায়ীদের। অনেক কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন ও হোটেল মালিক অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়ি পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। সাজেকে নানান স্থাপনা তৈরি হওয়ার সুবাদে খাগড়াছড়ির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

গত এক দশকে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক আবাসিক হোটেল। এগুলোর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। কিন্তু করোনাকালে সবাই নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। হোটেল বন্ধ থাকায় কর্মসংস্থান হারিয়েছেন অনেকে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে সরকারি প্রণোদনা চান হোটেল ব্যবসায়ীরা।

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকাপ্রতি ঈদের ছুটিতে হোটেল-মোটেলগুলোতে রুম ফাঁকা পাওয়া ছিল মুশকিল। তখন খাগড়াছড়ি ও সাজেক সরগরম থাকতো পর্যটকদের পদচারণায়। কিন্তু এবার যেন সুনসান নীরবতা চারদিকে।

সাজেকের হোটেল ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হক যুবরাজের শঙ্কা, আগামী একবছরেও পর্যটন খাত আগের চাঙা অবস্থায় ফিরতে পারবে না। তিনি উল্লেখ করেন, ‘করোনার কারণে সাজেকের হোটেল মালিকরা আর্থিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাজেকের ১০৬টি আবাসিক হোটেল এখন পর্যন্ত (ঈদুল আজহা) বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মসংস্থান হারিয়েছে।’

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকাখাগড়াছড়ি শহরের হোটেল অরণ্য বিলাসের স্বত্বাধিকারী স্বপন চন্দ্র দেবনাথ জানান, হোটেল ব্যবসায়ীরা দুই ঈদে ও বিভিন্ন সরকারি বন্ধের আয় দিয়েই মূলত সারাবছর চলেন। তার মন্তব্য, ‘করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই ঈদে হোটেল বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন, যা আগামী পাঁচ বছরেও পূরণ হবে না। অনেক হোটেল মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। হোটেল বন্ধ থাকলেও ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ বিবিধ খরচ কমছে না। সরকার অন্যান্য খাতে প্রণোদনা দিলেও পর্যটন নিয়ে চিন্তা করছে না।’

খাগড়াছড়ি ও সাজেকের দুই শতাধিক হোটেল ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা গত পাঁচ-ছয় মাসে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন, এমন দাবি খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়ার। তার কথায়, ‘সরকার পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিলে ধীরে ধীরে হয়তো আগের প্রাণচঞ্চল অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব। তবে তা পূরণে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।’

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকাখাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যটন শিল্পের ক্ষতির বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’