উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর-মাছে ভরা – এটাই কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচয় বহন করে। হাওরাঞ্চল হওয়ায় মাছ চাষই এখানকার বাসিন্দাদের মূল পেশা। তারা সমন্বিত পদ্ধতিতে জলাশয়ে মাছের সঙ্গে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে এসব এলাকা চোখে পড়ে।
আবহমান বাংলার অন্যান্য গ্রামের মতোই সুন্দর কিশোরগঞ্জ। চারদিক গাছগাছালিতে ভরা। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। এসব দেখে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে কিশোরগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নিকলী উপজেলায় পৌঁছালাম। দ্বীপের মতো ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের নাচন, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা, রাতারগুলের মতো ছোট জলাবন ও হাওরের নানান স্বাদের মাছ। এসব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় নিকলীর অপরূপ হাওর ভ্রমণে।
নিকলীর বেড়িবাঁধে পর্যটকদের কেন্দ্র করে ছোট-বড় দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ছোট ছোট নৌকার পাশাপাশি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আছে। এগুলো ভাড়া নিয়ে হাওরে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানো যায়। ছোট নৌকা ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকা। বড় নৌকার ক্ষেত্রে গুনতে হবে ৭০০-৮০০ টাকা।
দুপুরে হাওরের মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে। দাম তুলনামূলক সস্তা। এখানকার খাবারের হোটেলগুলো মাঝারি মানের। ১০০-১৫০ টাকায় খাওয়া যায় পুরো প্লেট।
পেটপূজার পর আমরা চললাম পাশেই নিকলী হাওরের আরেক অংশে। হাওরের দু’পাশের রাস্তা দেখার আনন্দ অন্যরকম। উভয় দিকে গৃহস্থ বাড়ি। গরু-ছাগল চরে বেড়ায়। ঝকঝকে আকাশের নিচে গ্রামীণ পথে হাঁটতে দারুণ লাগে। খড়ের গাদা ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।
বিকাল ফুরিয়ে এলে সূর্য দিগন্তে নামে। এমন দৃশ্য দেখার ইচ্ছে কখনও ফুরায় না। যত দেখি ততই মুগ্ধ হই। কিন্তু সময় সীমিত। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে ফিরতি পথ ধরি। এখনও কানে বাজে হাওরের শোঁ শোঁ আওয়াজ।
বাসে যেতে হলে ময়মনসিংহের পাট গুদাম এলাকা থেকে উঠতে হবে। ভাড়া নেবে জনপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা। কটিয়াদি বা কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশায় নিকলী হাওর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে সায়েদাবাদের কাছে গোলাপবাগ মাঠ থেকে কিশোরগঞ্জের দিকে বাস ছাড়ে। এক্ষেত্রেও কটিয়াদি নেমে যেতে হবে।
বাস ছাড়াও কিশোরগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ অত্যন্ত ভালো। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৮টায় ছাড়ে আন্তঃনগরট্রেন এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস। বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ। ট্রেনে গেলে কিশোরগঞ্জের আগে গচিহাটায় নেমে যেতে হবে।