কক্সবাজারের পর্যটন স্বাভাবিক হয়নি এখনও

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকরোনাভাইরাস মহামারির কারণে পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর বেড়ানোর জন্য বিভিন্ন শর্তে সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হয়েছে কক্সবাজার। তবে এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি এখানকার পর্যটনের চিত্র। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন ছাড়া পর্যটক সংখ্যা থাকে হাতেগোনা। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি অসময় (অফ সিজন) হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে করোনা পরিস্থিতির আরও উন্নতির পর আসন্ন পর্যটন মৌসুমের জন্য আশায় বুক বাঁধছেন তারা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন নির্ভর সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ও শহরকে রেড জোন জানিয়ে সব ধরনের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়া হয়।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসংশ্লিষ্টদের দাবি, করোনাভাইরাসের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন খাতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ পর্যটন এলাকাটিতে গত পাঁচ মাস চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, প্রায় ৬০০ রেস্তোরাঁ, বার্মিজ মার্কেটসহ পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কর্মহীন হয়ে পড়েছে আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁর লক্ষাধিক মানুষ।

গত ১ জুলাই লকডাউন শিথিল করে কক্সবাজার শহরের দোকানপাট খুলে দেওয়া হলেও ১৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল পর্যটন কেন্দ্রগুলো। জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ১৭ আগস্ট থেকে পর্যটকদের জন্য সীমিত পরিসরে দর্শনীয় স্থানগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ ১৩টি শর্তে পর্যটন খাত উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শহরের হোটেল-মোটেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহল জোরদার রয়েছে। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে জরিমানা গুনতে হবে, এমনকি হোটেল বা পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদারের মন্তব্য, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকায় অনেকের হাতে অর্থকড়ি নেই। এ কারণে পর্যটক সংখ্যা এখনও অপ্রতুল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি, প্রশাসনের বিভিন্ন শর্ত, অতিবৃষ্টি ও অফ সিজনের কারণে বিদেশিরা তো দূরের কথা, দেশি পর্যটকরাই তেমন আসছেন না।’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খানের দাবি, কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেলে থাকার সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, কক্সবাজারের পর্যটন খাত এখনও স্বাভাবিক হয়নি। একদিকে করোনা, অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নেই। তবে তার আশা, ‘করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে আশার আলো দেখবো আমরা।’

একইরকম আশাবাদী কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসার্স অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যটনের জন্য এখন অসময়। এর মধ্যেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের কিছু পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। আশা করছি, কক্সবাজারের পর্যটন খাত চেনা রমরমা অবস্থায় ফিরে আসবে।’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ফের চালুর পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনের উপস্থিতি দেখেছি। পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগের মতোই তাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।’