পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা, অসুস্থ অবস্থায় ভ্রমণ না করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলা এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুসরণ করতে নির্দেশনা দিয়ে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা– করোনা আতঙ্ক, কয়েক মাস ধরে লকডাউনের কারণে আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়া, একা বেড়ানোর অনিচ্ছা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ঝক্কিসহ বিভিন্ন কারণে পর্যটকদের মধ্যে ভ্রমণের আগ্রহ কমেছে।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া জানান, খাগড়াছড়ি ও সাজেকে সব মিলিয়ে ১৫০টির মতো হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস রয়েছে। খাগড়াছড়ির গ্রিন স্টার হোটেলের এই মালিকের দাবি, গত ২৮ আগস্ট পর্যটন কেন্দ্র আবারও চালুর পর হোটেলটিতে কয়েকদিন ছয়-সাতজন করে পর্যটক পেয়েছেন। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সব মিলিয়ে ১২ জন পর্যটক ওঠেন এখানে। তার কথায়, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গড়ে ১০ শতাংশ পর্যটক দেখা গেলেও অন্যান্য দিন তা ৫ শতাংশে নেমে যায়।’
সাজেকের রয়েল সাজেক এবং হিমাচল হোটেল দুটির পরিচালক এসএম জিয়াউল হক যুবরাজ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সাজেক আবারও চালু হলেও পর্যটক সংখ্যা খুবই কম। করোনাকালের আগে দিনে গড়ে চার-পাঁচ হাজার ভ্রমণপ্রেমী সাজেকে আসতো। গত কয়েকদিন সেই সংখ্যা ১০০-১৫০ জনের বেশি হয়নি। আগের মতো বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম না হওয়া পর্যন্ত প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে না।’
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট বিক্রেতা কোকোনাথ ত্রিপুরার দাবি, করোনাকালের আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৫৫ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। গত কয়েকদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এসব দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই স্থানীয়। তার আশা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী ডিসেম্বর মার্চ পর্যন্ত প্রত্যাশিত পর্যটক সংখ্যা দেখা যেতে পারে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। এখানকার তত্ত্বাবধায়ক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মহামারির আগে টিকিট বিক্রি থেকে একদিনে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত এসেছিল। পর্যটন কেন্দ্রগুলো ফের চালুর পর গত কয়েকদিনে গড়ে ৫-৭ হাজার টাকা আয় হয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষের। তিনি উল্লেখ করেন, এখন গড়ে প্রতিদিন ২০০-২৫০ পর্যটক দেখা যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। জেলার বাইরের পর্যটকরা বেড়াতে আসছেন না বললেই চলে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের মন্তব্য, করোনা আতঙ্কের কারণে পর্যটক সমাগম কম। তিনি মানছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পুরনো সুসময় ফিরে পাওয়া কঠিন। তার কথায়, ‘এখনও লোকজনের মধ্যে করোনা আতঙ্ক কাজ করছে। ’
ভ্রমণপিপাসুরা শর্ত মেনে ঘোরাফেরা করছেন কিনা তা নজরদারি করছে জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ নিশ্চিত করেছেন, পর্যটকদের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন আছে।