পর্যটকদের নজর কাড়ছে ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনা

খাগড়াছড়ির ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনায় ভ্রমণপিপাসুরাখাগড়াছড়ির পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠেছে ‘তুয়ারি মাইরাং’। দিঘীনালা উপজেলার দুর্গম সীমানা পাড়া গ্রামে প্রায় শত ফুট উঁচু এই ঝরনার সন্ধান মিলেছে। স্থানীয়দের বাইরে এই ঝরনা সম্প্রতি অন্যান্য জেলার পর্যটকদের নজর কেড়েছে।

পাহাড়, নদী, উপত্যকা, ঝরনা, ঝিরিসহ সবুজ প্রকৃতি ও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য খাগড়াছড়ি বেড়ানোর জন্য বেশ আকর্ষণীয়। স্থানীয়দের কাছে এই পাহাড়ি জেলার পুরোটাই ভূস্বর্গ।

গত একদশক ধরে খাগড়াছড়িতে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্বাভাবিকভাবেই তা কমেছে। এখন অবশ্য অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে স্থানীয়রা ছাড়াও সীমিত পরিসরে অন্যান্য জেলার ভ্রমণপিপাসুরা ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনা দেখতে আসছেন। তাদের নিরাপত্তা ও গাইড সুবিধা দিচ্ছেন আপাতত গ্রামের বাসিন্দারাই।

খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যদিঘীনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, খাগড়াছড়ি সদর ও দিঘীনালা উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত সীমানা পাড়া গ্রামটি। লোকালয় থেকে হেঁটে ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনায় পৌঁছাতে সময় লাগে একঘণ্টা।

উঁচু-নিচু পাহাড়ে এখন স্থানীয়রা জুম চাষ করছেন। ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনায় যাওয়ার পথে জুমের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। কয়েকটি পাথুরে জায়গা পারাপারে একমাত্র ভরসা প্রাকৃতিক লতা। সেই লতা বেয়ে পাহাড় থেকে নেমে হাঁটতে হয় পাহাড়ি ঝিরিতে। ঝিরির দুই পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়ি ঝিরিতে গা ছমছম অনুভূতি হয় অনেকের। ঝিরিতে শত বছর ধরে আটকে আছে বড় বড় পাথরখণ্ড। পাথর ও ক্যাসকেড বেয়ে নামছে পানির স্রোত।

খাগড়াছড়ির ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনায় যাওয়ার পাহাড়ি পথউঁচু পাহাড় ও গভীর অরণ্যের কারণে ঝিরি পর্যন্ত পৌঁছায় না সূর্যের আলো। পথে আরও কয়েকটি ঝরনা দেখা যায়। শীতল ঝিরিপথের হাঁটার পর সুবিশাল তুয়ারি মাইরাং ঝরনার দেখা মেলে। পাথরের পাহাড় বেয়ে নামছে এটি। এত উঁচু ঝরনা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। এর উল্টো দিকে পাথুরে পাহাড়।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা আবদুস সাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে আটকে ছিলাম। তুয়ারি মাইরাং ঝরনার কথা জেনে একটু প্রশান্তির খোঁজে এসেছি। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এটি আদর্শ। ঝরনার কাছে পৌঁছানোর পথ অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। পাহাড় ও ঝরনা ভালো লাগে যাদের, তারা বেশ উপভোগ করবেন জায়গাটা।’

স্থানীয় ভ্রমণপিপাসু রবিউল ইসলাম, মাকসুদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম রাজু ও ইসরাফিল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘সীমানা পাড়া গ্রামের তুয়ারি মাইরাং ঝরনার কথা শুনে দেখতে এলাম। এখানে প্রকৃতির মতো পথচলা উপভোগ করতে হবে। তুয়ারিং মাইরাং প্রায় শত ফুট উঁচু। স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেঁটে কিছুটা কষ্ট করতে হয় পৌঁছাতে।’

খাগড়াছড়ির ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনায় যাওয়ার পাহাড়ি পথে ভ্রমণপিপাসুরাস্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরার মন্তব্য, ‘তুয়ারি মাইরাং ঝরনায় যাওয়ার পথ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তাসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে দিলে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সুবিধাজনক হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তুয়ারি মাইরাং ঝরনার কথা শুনেছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তার আশ্বাস, ‘ঝরনাটি উপভোগের জন্য যাতায়াতের রাস্তা ও পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের চিন্তাভাবনা রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, ‘মাটিরাঙায় আরেকটি ঝরনার খোঁজ পাওয়া গেছে। জেলার সব ঝরনায় যাওয়া, থাকা, খাওয়া ও বিশ্রামের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্প নেওয়া হবে।’