জানা গেছে, অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সংখ্যা প্রতিদিন ১ হাজার ২৫০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন করা হলে বিদেশি পর্যটক সমাগম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করে টুয়াক। একইভাবে দেশীয় পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে বিমুখ হয়ে পড়বে। এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
টুয়াকের প্রধান উপদেষ্টার কথায়, ‘পর্যটনকে ভালোবেসে বছরের মাত্র পাঁচ মাস ব্যবসার ঝুঁকি নিয়ে উদ্যোক্তারা হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে আছে জাহাজ ব্যবসা, হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্তোরাঁ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা। সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাতযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারানোর পাশাপশি তিন লক্ষাধিক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে।’
আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেন্টমার্টিনে পর্যটন শিল্প বিকশিত হওয়ার আগের অবস্থা ফিরে আসতে পারে। যেমন- সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ, প্রবাল উত্তোলন, প্রবাল পাথরকে নির্মাণ কাজে ব্যবহার, মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস, শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করবে স্থানীয়রা। এতে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে।
টুয়াকের সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘গত সাত মাস কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবে পর্যটন স্পট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারা সরকারি কোনও সহায়তা পাননি। এমন পরিস্থিতিতে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাতযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে সার্বিক পর্যটন শিল্পে ধস নামবে।’
সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনটি দাবি উত্থাপন করেছেন টুয়াকের সভাপতি। এগুলো হলো– চলমান অবস্থায় আগামী পাঁচ বছর পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ অব্যাহত রাখা। দেশি পর্যটকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা এবং কোনও ধরনের সেবা/ভ্রমণ চার্জ আরোপ না করা। শুধু বিদেশি পর্যটকদের নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে সেবা/ভ্রমণ চার্জ আরোপ করা যেতে পারে। টুয়াকের ‘প্লাস্টিক ফ্রি ইকো-ট্যুরিজম, কক্সবাজার’ নামক প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন ও সহায়তা প্রদান।
১. সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ রক্ষায় ক্ষতিকারক সব ধরনের প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের ব্যবহার ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
২. দ্বীপের ভাঙনরোধে মূল ভূখণ্ড থেকে ৫০০ মিটার দীর্ঘ আধুনিক জেটি তৈরির মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখা।
৩. পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক ইকো হোটেল, মোটেল এবং হোম স্টে মডেল তৈরি ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।
৪. দ্বীপে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং জেনারেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
৫. দ্বীপের একটি অংশকে পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জীববৈচিত্র্যের জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা।
৬. পর্যটক ও স্থানীয়দের ময়লা-আবর্জনা একটি নির্ধারিত স্থানে সংগ্রহ করে অপচনশীল আবর্জনাগুলো দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা এবং প্লাস্টিক ফ্রি সেন্টমার্টিন ঘোষণার প্রকল্প গ্রহণ করা।
৭. সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভাঙনরোধে জিও ব্যাগের পরিবর্তে চারপাশে বেশি বেশি কেয়াবন তৈরি, নারিকেল গাছ ও ঝাউগাছের বেষ্টনী তৈরির মাধ্যমে বালিয়াড়ি রক্ষা করা।
৮. সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূগর্ভস্থ ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক সেন্ট্রাল এসটিপি বাস্তবায়নের প্রকল্প হাতে নেওয়া।
৯. দ্বীপের ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে সমুদ্রের পানিকে শোধনের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করার প্রকল্প গ্রহণ করা।
১০. প্রবাল প্রাচীরের সুরক্ষা এবং প্রবাল পাথরের স্তর বৃদ্ধিতে দেশি-বিদেশি বৈজ্ঞানিকদের নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালানো।
১১. আন্ডারওয়াটার ন্যাচার সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ, সমুদ্র তলদেশের প্রবাল উত্তোলন ও মৎস্য প্রজননে ব্যাঘাত ঘটে এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
১২. ব্লু ইকোনমিতে মেরিন ট্যুরিজম বিকশিত করতে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে রেসপন্সিবল ইকো-ট্যুরিজম মডেল হিসেবে গড়ে তোলা।