শেরপুরে খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে ফাতেমা রানির তীর্থ উৎসব

ফাতেমা রানির ২৩তম বার্ষিক তীর্থ উৎসবশেরপুরের নালিতাবাড়ীতে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টান ধর্মপল্লী। পর্তুগালের ফাতেমা পৌরসভার আদলে পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশ রয়েছে এখানে। তাই ১৯৯৮ সালে এই ধর্মপল্লীকে ‘ফাতেমা রানির তীর্থস্থান’ ঘোষণা করেন ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস অ্যা. গমেজ। সেই থেকে ভিন্ন ভিন্ন মূলসুরের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার বার্ষিক তীর্থ উৎসব হয়ে থাকে জায়গাটিতে।

সাধু লিওর ধর্মপল্লীতে ‘দীক্ষিত ও প্রেরিত, মঙ্গলবাণী সাক্ষ্যদানে ফাতেমা রানি মা মারিয়া’ মূল সুরের ওপর ভিত্তি করে গত ৩০ অক্টোবর তীর্থ উৎসবে যোগ দেন সহস্রাধিক রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই দিনের অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়েছে মাত্র ছয় ঘণ্টায়! সকাল সাড়ে ৯টায় আলোক শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফাতেমা রানির ২৩তম বার্ষিক তীর্থ উৎসব।

তীর্থ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক রেভারেন্ট ফাদার মনিন্দ্র মাইকেল চিরান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, খ্রিষ্টভক্তরা নিজেদের পাপমোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ নেন। প্রায় দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি পথ অতিক্রম শেষে মাদার ম্যারির ৪৮ ফুট উচু প্রতিকৃতির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হন তারা। এরপর উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা ফাতেমা রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানান ও তার সাহায্য প্রার্থনা করেন।

৩০ অক্টোবর দুপুরে জীবন্ত ক্রুশের পথ পরিভ্রমণ ও মহাখ্রিষ্টযোগের (সমাপনী প্রার্থনা) মাধ্যমে বিকাল সাড়ে ৩টায় তীর্থোৎসবের সমাপ্তি হয়। সমাপনী খ্রিষ্টযোগে পৌরহিত্য করেন ময়মনসিংহ খ্রিষ্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।

বারোমারী ধর্মপল্লীর ভাইস চেয়ারম্যান ও নালিতাবাড়ী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লুইস নেংমিনজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্মল হৃদয়ের অধিকারিণী, ঈশ্বর জননী, খ্রিষ্টভক্তের রানি, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রানির কাছে এবার করোনা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে।’

ফাতেমা রানির ২৩তম বার্ষিক তীর্থ উৎসবফাতেমা রানির বার্ষিক তীর্থ উৎসবকে বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তীর্থোৎসব। প্রতিবছর দেশ বিদেশের প্রায় ৪০-৫০ হাজার তীর্থযাত্রী এই আয়োজন অংশগ্রহণ করে থাকে। তবে এবার কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে প্রতিটি ধর্মপ্রদেশের ধর্মপল্লী থেকে মাত্র ১২ জন করে স্থানীয় প্রতিনিধিসহ সহস্রাধিক তীর্থযাত্রী সমবেত হতে পেরেছেন।

শেরপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে এবারের তীর্থ উৎসব হয়েছে। সবাই যেন নির্বিঘেœ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য এবার ছিল পুলিশের তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।