গানের রাগিণী কার না ভালো লাগে! বেড়াতে গেলে তো সুরের সাগরে ভিজতে ইচ্ছে করে যখন-তখন। ঘুরতে গিয়ে যে হোটেলে উঠেছেন সেখানে সংগীতের সব উপকরণ থাকলে এবং সেখানে বসে প্রিয় শিল্পীর গান উপভোগের সুযোগ পেলে দারুণ লাগবে সবারই। কাল্পনিক কোনও গল্প নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগীতে অনুপ্রাণিত ও ডিস্কো থিমের এমন কিছু হোটেল রয়েছে। এগুলোর কোনোটির বহির্ভাগ বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সাজানো, কোনোটির রুমই যেন আস্ত একটা রেকর্ডিং স্টুডিও! এমনই ১১টি হোটেলের কথা রইলো এই প্রতিবেদনে।
ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে কিছুদিন আগে চালু হয়েছে সংগীতের মেজাজে সাজানো হার্ড রক হোটেল। নতুন হলেও কিংবদন্তি শিল্পীদের স্মৃতি জড়ো রয়েছে এতে। যেমন এলভিস প্রিসলির পরা কোট থেকে শুরু করে তারুণ্যে ফ্রেডি মার্কারির সংগীতচর্চায় ব্যবহৃত পিয়ানো স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন অতিথিরা।
এ হোটেলে রুমের সংখ্যা ৯০০। যেকোনও একটি বেছে নিয়ে অতিথিরা পছন্দ অনুয়ায়ী প্লে-লিস্ট সাজাতে পারেন। আর যারা প্রিয় সংগীতশিল্পীকে আরও ভালোভাবে অনুভব করতে চান, তাদের জন্য আছে ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা। ইলেক্ট্রিক গিটার ও হেডফোন ভাড়া নিয়ে তারা তৈরি করে ফেলতে পারেন স্টুডিও রুম। যারা রক সংগীতে নতুন, তাদের জন্য রয়েছে টিভিতে ভিডিও দেখে তালিম নেওয়ার সুযোগ।
জার্মানির ওসটবিভার্নের বিভারল্যান্ড রিসোর্টের বেশ কয়েকটি রুম সংগীতের রাগ-রাগিণী দিয়ে সাজানো। এছাড়া আছে ডিস্কো ডিভা অনুপ্রাণিত একটি রুম। আরেকটি কক্ষে চারটি পোস্টার ঢঙের বেড এমনভাবে ডিজাইন করা যেন দেখে মনে হবে কোনও ক্লাব স্টেজ। একইসঙ্গে আছে চমকপ্রদ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। বাতিগুলো চাইলে মেজাজ অনুযায়ী পাল্টানো যায়।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের এই হোটেলটি নামের সার্থকতা বহন করছে। হোটেলের বেশিরভাগ অংশই সংগীতে অনুপ্রাণিত। যেমন রিসিপশনের আদল ড্রাম কিটের মতো। বার হলো পিয়ানোর কি-বোর্ডে অনুপ্রাণিত।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের সিটি সেন্টার থেকে কয়েক গজ দূরত্বে অবস্থিত পপ হাউস হোটেল। মজার বিষয় হলো, এটি ‘আববা দ্য মিউজিয়াম’-এর ঠিকানাই ব্যবহার করে। ‘আববা’ হলো স্টকহোমের বিখ্যাত পপ ব্যান্ড। তাদের ঘিরেই সাজানো হয়েছে ৪৯ কক্ষবিশিষ্ট হোটেলটি। এর নকশা পুরোপুরি আলাদা।
তাইওয়ানের রাজধানীর এই হোটেলটির থিম অনন্য। বড়দিন থেকে শুরু করে মধ্যযুগীয় দুর্গের ছোঁয়া মেলে এতে। চোপিন রুম দেখলে মনে হবে যেন পোলিশ সংগীত পরিচালকদের সুর সৃষ্টির কারখানা! সিলিংয়ে মিউজিক নোট আর মেঝের একপাশে পিয়ানোর কি-বোর্ড। বাকি অংশ উজ্জ্বল মার্বেলে পরিপূর্ণ।
সংগীতে অনুপ্রাণিত দৃষ্টিনন্দন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সিম্ফোনি ছড়িয়ে আছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের আরিয়া হোটেলে। মাঝের খোলা জায়গায় সাদাকালো টাইলসে পিয়ানোর কি-বোর্ডের আদল। হোটেলের চারদিক সংগীতের ক্লাসিক্যাল, অপেরা, কন্টেম্পোরারি ও জ্যাজ ঘরানায় সাজানো। সেখানে প্রতিদিন লাইভ বিনোদন থাকে।
সুরের সাম্পানে ভাসার সব রসদই আছে প্যারিসের অ্যাপোস্ট্রোফি হোটেলে। চোখের সামনে আছে সংগীতের সবকিছুই। শুধু নিজের মধ্যে ধারণের চেষ্টা করলেই হলো! রুমের দেয়ালে ম্যানুস্ক্রিপ্ট ওয়ালপেপার ও সিলিংয়ে পিয়ানোর কি-বোর্ড। এমন আবহ গান-বাজনা চর্চায় অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে। রুমটির সুবিধার মধ্যে আছে মিউজিক প্লেয়ারের সঙ্গে গোসলের ব্যবস্থা।
সংগীতে অনুপ্রাণিত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ডিজনি’স অল-স্টার মিউজিক রিসোর্ট। এর বহির্ভাগ স্যাক্সোফোনসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের নকশায় সাজানো।
১৯৬৯ সালে জন লেনন ও ইয়োকো ওনো দম্পতি যে রুমে ছিলেন, সেটাকেই এখন আধুনিক স্যুটে রূপ দেওয়া হয়েছে। মন্ট্রিলের ফেয়ারমন্ট দ্য কুইন এলিজাবেথের ১৭ তলায় অবস্থিত রুমটিতে চারজনের থাকার ব্যবস্থা আছে। এ ঘরেই বিখ্যাত গান ‘গিভ পিস অ্যা চান্স’ গানের সৃষ্টি। অ্যাকুস্টিক গিটার ও রেডিও প্লেয়ার যোগ করে রুমটির শোভা বাড়ানো হয়েছে। এর প্রতি রাতের ভাড়া ১ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার (১ লাখ ৬০ হাজার টাকারও বেশি)।
রক সংগীতপ্রেমীদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য হতে পারে ইংল্যান্ডের ব্রাইটন শহরের হোটেল পেলিরোকো। এর ইন্টেরিয়র ডিজাইনে মেলে রক এন রোলের ছোঁয়া। ১৯ রুমের সবকটি আলাদা ঢঙে সাজানো। বেশিরভাগ রুমের ভাবনা সংগীতভিত্তিক। কোনোটি সম্মান জানাচ্ছে ডাব ও র্যাগে ঘরানাকে, কোনোটি নেতৃত্ব দিচ্ছে মোটাউনের। হোটেলের একটি বেডরুম এমনভাবে সাজানো যে, দেখে মনে হবে গানের দোকান রাফ ট্রেডে ঢুকে পড়েছেন!
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের ব্যাকস্টেজ হোটেলের লবি থেকে শুরু করে বার, বেডরুমসহ সবখানে যেন সুরের মূর্ছনা। বারে অতিথিরা চাইলে গিটার হাতে সংগীত পরিবেশন করতে পারেন। কেউ যদি শুধু গান শুনতে চান তাহলে ভাড়া নেওয়ার জন্য রেকর্ড প্লেয়ার আছে।
সূত্র: মেইল অনলাইন ট্রাভেল