পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও নিরাপত্তায় সজাগ কক্সবাজার প্রশাসন

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসাগরের ঢেউ, সৈকতসহ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতি বছর ঈদে কক্সবাজারে বেড়াতে আসে লাখো পর্যটক। শহরের চার শতাধিকের বেশি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে তখন উপচেপড়া ভিড় থাকে। এবারও ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি ভ্রমণপ্রেমী কক্সবাজারে বেড়াতে আসবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও হয়রানি রোধে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশসহ জেলা প্রশাসন বেশ সজাগ।

হোটেল-মোটেল জোনে রুম ভাড়া হিসেবে অতিরিক্ত টাকা আদায়, বুকিং দিয়েও হোটেল রুম না পাওয়া, টিকিট কাটার পরও বাস না থাকা, রেস্তোরাঁগুলোতে অতিরিক্ত দামে খাবার বিক্রি, পঁচা-বাসি খাবার পরিবেশন, পর্যটকদের সঙ্গে দোকানিদের খারাপ আচরণ ও আলোকচিত্রী-সিএনজি চালকদের হয়রানি রোধে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।

একইভাবে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, ইনানি, হিমছড়িসহ ছয়টি পয়েন্ট ছাড়াও দরিয়ানগর, রামুর বৌদ্ধ বিহার, রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়াসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বেড়ানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এসব তথ্য জানিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের (পর্যটন সেল) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম জয় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদুল ফিতরে বেড়াতে আসা পর্যটকরা যেন কোনও ধরনের প্রতারণার শিকার না হয় সেদিকে নজর রাখতে সব সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র। এসব স্থানে রয়েছে সিসি ক্যামেরা।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও হয়রানি রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দুটি ভ্রাম্যমাণ দল আর আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবে। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ দল সক্রিয় থাকবে। জেলা প্রশাসনের ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পালা করে সার্বক্ষণিক এই দায়িত্ব পালন করবেন।

ঈদের দিন থেকে শুরু করে সপ্তাহখানেক পর্যন্ত কক্সবাজারের সবক’টি বিনোদন কেন্দ্রে পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। পোশাকধারীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশের কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দল সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবে। পাশপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক নজরদারি অব্যাহত রাখবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। বেড়াতে আসা পর্যটকরা যেন চুরি ও ছিনতাইসহ কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্কতা অব্যাহত রাখবে।’

কক্সবাজারএদিকে কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। হোটেল সি-গার্লের অভ্যর্থনা ব্যবস্থাপক এফএম নূর-এ-আলম মিথুন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে তাদের হোটেলের ৮০ ভাগ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন খাবারের প্যাকেজ রেখেছে তারকামানের হোটেলটি।

পছন্দের স্পটে পর্যটকদের স্বাচ্ছ্যন্দ্যময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি ও সৈকতকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। সংস্কার কাজ চলতে থাকা মেরিন ড্রাইভ রোডে তাদের নির্বিঘ্নে চলাফেরার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা যায়।

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসবে বলে আশা করছেন কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান। তিনি মনে করেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের বেশি আয় হবে এবার।