পর্যটকদের জন্য সেবার মান বাড়ানোর পরামর্শ বিদেশি সাংবাদিকদের

পর্যটন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদেশি সাংবাদিকরাবাংলাদেশের মানুষ আন্তরিক। এখানে বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রার পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্য। তবে পর্যটকদের জন্য সেবার মান আরও বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে ঐতিহাসিক স্থানের ইতিহাস বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা ১০টি দেশের ২৬ জন সাংবাদিক ও পর্যটনকর্মী এভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

পর্যটন খাতকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড। তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা। গত ১৩ এপ্রিল ঢাকায় আসেন তারা। তাদের সমন্বয়ের দায়িত্ব পায় ট্যুর অপারেটর ট্যুরিজম উইন্ডো’কে। ২৬ জন অতিথির ভ্রমণের ব্যয় বহন করছে পর্যটন বোর্ড।

জাপান, থাইল্যান্ড, চীন, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, লেবানন, নেদারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন থেকে এসেছেন ২৬ সাংবাদিক ও পর্যটনকর্মী। গত ২৩ এপ্রিল তারা ঢাকা ত্যাগ করেন। নিজেদের দেশে ফিরে গিয়ে এসব অভিজ্ঞতা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরবেন এই সাংবাদিকরা।

ঢাকায় বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উপভোগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২৬ অতিথির ভ্রমণ। এরপর সুন্দরবন, কক্সবাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ, লালনের মাজার, বান্দরবান ও ঢাকার পানাম সিটি ঘুরে দেখেন তারা।

মিসাইল ডিজিটাল স্টুডিওসের প্রোগ্রাম হেড টিম কানিংহ্যামবাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন দেখে মুগ্ধ নিউ ইয়র্কের মিসাইল ডিজিটাল স্টুডিওসের প্রোগ্রাম হেড টিম কানিংহ্যাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বেশ আন্তরিক। পহেলা বৈশাখের আয়োজন অনেক রঙিন। এছাড়া দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও সুন্দরবন দেখে আমি অভিভূত। এখানকার প্রতিটি প্রান্তরে মানুষের আন্তরিকতা পেয়েছি, তাদের মুখে হাসি দেখেছি।’

টিম কানিংহ্যামের মন্তব্য, ‘আমাদের সঙ্গে অনেক পুলিশ ছিল। এতে বোঝা যায়, এখানে আরও নিরাপদ পরিবেশ দরকার। বিদেশি পর্যটকদের মনে নিরাপত্তার আস্থা অর্জন করতে হবে। পুলিশি পাহারায় আনন্দ-উল্লাস হয় না।’

লেবানিজ সাংবাদিক ফিনবার অ্যান্ডারসনলেবাননের ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ফিনবার অ্যান্ডারসন বাংলাদেশের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। তার কথায়, ‘বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা বৈচিত্র্যময়। বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার দেখে ভালো লেগেছে। তবে সেখানে সময় কাটানোর জন্য কিছু কার্যক্রম থাকা প্রয়োজন।’

উত্তরবঙ্গের হোটেলগুলোর সেবার মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই লেবানিজ সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় অনেক ঐতিহাসিক স্থান দেখলাম। পর্যটক বৃদ্ধিতে এগুলোর পেছনে গল্প মানুষকে জানানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছিলেন আলেক্সান্ডার ম্যাথাস গ্রোয়েন। ছবি তোলা তার নেশা ও পেশা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অপরূপ। আমরা যে বাংলাদেশের গল্প শুনেছি, এখানে এসে ভিন্ন চিত্র দেখলাম। পর্যটনে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমার বিশ্বাস, বিশ্বের যে কেউ বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা উপভোগ করবে। তবে আরও বেশি উন্নয়ন দরকার। উন্নত হোটেল, ভ্রমণপিপাসুদের সুযোগ-সুবিধাসহ সেবার মান বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।’

পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা. ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্বের সামনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য আমরা ১০টি দেশের ২৬ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমাদের আশা, তাদের দেশের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে খবর প্রকাশ হলে অনেকেই বেড়াতে উদ্বুদ্ধ হবেন।’