উত্তর গোলার্ধে মে মাসে গ্রীষ্মের অসহনীয় দাবদাহ দেখা দেয়। উত্তাপ এড়াতে অনেক ভ্রমণপিপাসু বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। সুতরাং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভ্রমণের সুযোগও বাড়ে! জেনে নিন মে মাসে বেড়ানোর জন্য কোন পাঁচটি জায়গা জুতসই।
আমেরিকার টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেম্ফিসে বেড়ালে দেশটির সংগীত ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে ঘুরে আসা হয়ে যায়। মে মাস টেনেসির এই দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ঘুরে আসার জন্য উপযুক্ত সময়। গ্রীষ্মকালে সেখানে সহনীয় ঊষ্ণতা থাকে। মিসিসিপির নদীর আর্দ্র আবহাওয়া অবশ্য মেলে না। ‘মেমোরিয়াল ডে’ উপলক্ষে ঘুরে আসার জন্য মেম্ফিস চমৎকার জায়গা। পুরো মে মাসজুড়ে এই শহরে চলবে গান, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও ভোজন-সংক্রান্ত মনমাতানো নানান উৎসব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— বিয়েল স্ট্রিট মিউজিক ফেস্টিভ্যাল (৩ থেকে ৫ মে), বারবিকিউ কনটেস্ট (১৫ থেকে ১৮ মে) ও রিভার রান (২৫ মে)। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রয়েছে মাসব্যাপী বেশকিছু বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী।
মেম্ফিসে ঘুরে দেখার মতো বিখ্যাত স্থানের তালিকায় আছে গ্রেসল্যান্ড। সেখানেই জন্মেছিলেন রক এন’ রোলের রাজা এলভিস প্রিসলি। আরও আছে ব্লুজ সংগীতের শেকড়গাথা বিয়েল স্ট্রিট। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ পিবডি হোটেলে প্রতিদিনের হাঁসের প্যারেড।
সৌল সংগীতের ইতিহাস জানতে আগ্রহ থাকলে ঘুরে আসতে পারেন স্ট্যাক্স মিউজিয়াম অব আমেরিকান সৌল মিউজিকে। জাদুঘরটিতে আছে মার্কিন গায়ক আইজাক হেইসের নীল রঙা ১৯৭২ সালের গাড়ি, আমেরিকার সংগীতশিল্পী আইক টার্নারের ফেন্ডার গিটার ও মিসিসিপি ডেল্টা অঞ্চলের শতবর্ষী গির্জা।
গ্রীষ্মের দাবদাহ যদি অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছায় তাহলে জেরি’স স্নো কোনসে’র দ্বারস্থ হলে শীতল আমেজ মিলবে। তবে সেখানে লম্বা লাইন ধরতে হতে পারে। বেদনাদায়ক কিন্তু আমেরিকার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ লরেইন মোটেলে ন্যাশনাল সিভিল রাইটস মিউজিয়াম ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি জায়গা। ১৯৬৮ সালে মোটেলটির একটি ব্যালকনিতে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যা করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার বালি যেন গ্রীষ্মপ্রধান এশিয়ার এক স্বর্গীয় রূপ। দেশটির বহু দ্বীপের মধ্যে এটাই সবচেয়ে জনপ্রিয়। নিরক্ষরেখার বলয়ে থাকায় সেখানে সাধারণত তাপমাত্রা খুব বেশি বদলায় না। এক্ষেত্রে পার্থক্য গড়ে দেয় উচ্চতা। বালির অপূর্ব সুন্দর পাহাড়গুলোতে শীতল আমেজ মেলে। এখন সেখানে শুষ্ক মৌসুম। একইসঙ্গে ভরা মৌসুম (ইস্টার) ও পর্যটন মৌসুমের (জুলাই) মাঝামাঝি হওয়ায় মে মাসে বালিতে পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পায়। তাই ভ্রমণের খরচ তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
দ্বীপটির সেরা কয়েকটি সৈকতের মধ্যে আমেদ বিচ প্রবাল প্রাচীর ও জাহাজের ধ্বংসাবশেষের জন্য ডুবুরিদের প্রিয়। কার্মা বিচে পৌঁছাতে চাই ফানিকুলার নামক বিশেষ ধরনের যানবাহন। এটি খাড়া পাহাড়ি এলাকায় চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বডি ম্যাসাজ ও সার্ফিং বোর্ডের ওপর যোগব্যায়ামের ব্যবস্থা আছে এই বেলাভূমিতে।
সানুর বিচে অনেক রিসোর্ট। সেখানকার মৎস্যজীবী গ্রামীণ পরিবেশ ঠিকই মুগ্ধতা ছড়ায়। কাজেই এই বেলাভূমিতে পর্যটকেরা সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। একইসঙ্গে জেলেদের জীবনযাপন কেমন তাও ভেসে ওঠে তাদের সামনে।
বালিতে সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র উবুদ শিল্পপ্রেমী ও ভোজনরসিক পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়। পল্লী আবহে আধুনিক ইউরোপীয় কলাকৌশল ও এশীয় স্বাদের ফিউশনের স্বাদ নিতে উবুদে ‘মোজাইক’ রেস্তোরাঁর জুড়ি মেলা ভার।
জমকালো পরিবেশে থেকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বালির ‘আমানকিলা’ হোটেলে চেক-ইন করা যায়। সেখানে গলফ ট্রলিতে চড়ে কালো মাটির সৈকতে ঘুরে আসার সুযোগ রয়েছে।
ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত লিসবন ১৫০০ শতকের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও আধুনিক সভ্যতার উত্থানের পর শহরটি কিছুটা বিস্মৃত হয়ে যায়। তবে গত এক দশক ধরে লিসবন পর্যটকদের কাছে আবার পছন্দনীয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। অনেকের মতে, এটি ইউরোপের সবচেয়ে নান্দনিক শহর। টাগাস নদীর ধারে এর পাহাড়ি এলাকা দেখতে অপূর্ব।
মে মাসে গরম শুরুর আগের সময়টা পাওয়া যায় পর্তুগালের রাজধানীতে। এ সময় পর্যটকদের ভিড়ও থাকে কম। ফলে সবকিছুই মনে হবে সাশ্রয়ী।
টেনিস খেলার ভক্তরা মে মাসের শুরুর দিকে লিসবনের এস্তোরিল টেনিস ক্লাবে উপভোগ করেন মিলেনিয়াম এস্তোরিল ওপেন। গত ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট চলে ৫ মে পর্যন্ত।
পর্তুগালের ও এর প্রতিবেশী স্পেনের সংস্কৃতি উদযাপনের আয়োজন দ্য ফেস্টিভ্যাল অব আইবেরিয়ান মাস্ক হবে আগামী ১৬ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। এতে থাকবে দুই দেশের কারুশিল্প প্রদর্শনী, কনসার্টসহ অনেক কিছু।
এই শহরের নব্য শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক আকর্ষণ ‘আর্কোলিসবোয়া’। নতুন হলেও উৎসবটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ লিসবনকে ‘নতুন বার্লিন’ আখ্যা দিয়েছেন। এ বছর কর্দোয়ারিয়া ন্যাচনালে আগামী ১৬ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ‘আর্কোলিসবোয়া’।
পেরু
মে মাস থেকে পেরুর আবহাওয়া শুষ্ক হতে শুরু করে। তাই দক্ষিণ আমেরিকার পর্বতসারি আন্দেজে দিনে রৌদ্রজ্জ্বল ও রাতে কনকনে ঠাণ্ডা থাকে। তবুও এ সময় সেখানে পর্যটকদের তেমন একটা ভিড় দেখা যায় না। মরুভূমি থেকে শুরু করে উঁচু পর্বত, এমনকি আমাজন জঙ্গল রয়েছে বলে পেরুতে অঞ্চলভেদে আবহাওয়ার বেশ বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়। তাই দেশটির কোন অঞ্চলে বেড়াতে যাবেন তার ওপর নির্ভর করবে প্যাকিংয়ের ধরন। যেমন আন্দেজে যেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, আমাজনে তা হবে অন্যরকম।
পেরুর জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় আছে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা স্বাস্থ্যকর কাছা মাছ (ফেরবিচে) থেকে শুরু করে পেরুভিয়ান-স্টাইলের স্ক্যালোপ (শামুক) ও মিষ্টি আলু কিংবা স্কোয়াশ দিয়ে বানানো ডোনাট আকৃতির ‘পিতারোনেস’। সমগ্র লাতিন আমেরিকার রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে সেরা ‘সেন্ট্রাল’ লিমায় অবস্থিত।
মে মাসে পরিচ্ছন্ন আকাশ থাকায় রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ থাকে পেরুতে। স্যাকরেড ভ্যালির পাহাড়ের একপাশে কাঁচের ঘরে শুয়েবসে দেখা যায় চোখধাঁধানো চারপাশ। এ সময় চাইলে পর্যটকরা পরতে পারে স্কাইলজ অ্যাডভেঞ্চার স্যুট।
শুধুই মে মাসে পেরুতে উপভোগ করা যাবে ‘ফিয়েস্তা দে লা ক্রুজ’। আন্দিয়ান হাইল্যান্ডসে ২ থেকে ৪ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই ধর্মীয় উৎসব। এতে ক্রুশের মিছিল থেকে শুরু করে গানবাজনা ও আতশবাজিসই অনেক কিছু রয়েছে।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইডাইয়ের কারণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মালাওয়ি। ফ্লাইট বুকিং দেওয়ার আগে সেখানকার আবহাওয়া জেনে নেওয়া ভালো। বিশেষ করে দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল। দক্ষিণ আফ্রিকান এই ক্ষুদে দেশটির কথা ভ্রমণপ্রেমীদের অনেকেরই অজানা। তবে সেখানকার সৌন্দর্য এককথায় অপূর্ব। মালাওয়ির প্রকৃতি যেমন চমৎকার, মানুষগুলোও বন্ধুসুলভ। মে মাসে দেশটির আবহাওয়া বেশ শুষ্ক ও কিছুটা ঠাণ্ডা থাকে। তাই এ সময় মালাওয়ি ভ্রমণ শুধু আরামদায়কই নয়, বর্ষার সমাপনী ঘটায় সবুজের সমারোহের কমতি থাকে না।
‘লেক মালাওয়ি’তে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। এটি সমগ্র আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ। বিশ্বের যেকোনও হ্রদের চেয়ে সেখানে বেশি প্রজাতির মাছ রয়েছে। স্বচ্ছ স্বাদুপানিতে স্নোর্কেলিং ও ডাইভিং করতে চাইলে লেক মালাওয়ির বিকল্প নেই। বিভিন্ন প্রজাতি ও নানান রঙের মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন পাখি, বন্য শূকর, বৃহৎ বানর বেবুন, জলহস্তি ও হাতির বিচরণ দেখা যায় সেখানে।
লেক মালাওয়ি ছাড়াও মালাওয়ির দর্শনীয় স্থানের তালিকায় রয়েছে মাউন্ট মুলাঞ্জে। দেশটির দক্ষিণে অবস্থিত এই সুউচ্চ গ্রানাইট পর্বতের নিচে সবুজের স্বর্গ। আনাড়ি ও দক্ষ পর্বতারোহীদের জন্য সেখানে হাইকিং বেশ উপভোগ্য।
সূত্র: সিএনএন