সাদা বালির সৈকত, সাগরমুখো চলাফেরার জায়গা, প্রাচীন স্থাপত্য ও সুস্বাদু খাবারের রেস্তোরাঁ— সব মিলিয়ে ফ্রান্সের নিস বেড়ানোর দারুণ গন্তব্য। সমুদ্রের জলে কাইটসার্ফিং, দর্শনীয় জাদুঘরগুলো ঘুরে ইতিহাস দেখা অথবা সৈকতে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে সব ধরনের ভ্রমণপ্রেমীর জন্য এই ফরাসি শহর অতুলনীয়। রোমাঞ্চপ্রিয়, শিল্পপ্রেমী ও নবদম্পতিদের অন্যতম আকর্ষণ নিস। মনোরম শহরটির আনাচে-কানাচে অনেক ল্যান্ডমার্কের পাশাপাশি চোখে পড়বে অদেখা-অজানা সৌন্দর্য।
* লম্বা সবুজ পাম গাছে ঘেরা নিসে বিকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ঘুরে বেড়ালে দারুণ লাগে। ফিরোজা-নীল জলের সিনেমাস্কোপিক দৃশ্যের পাশে সমুদ্র উপকূলে হাঁটা সব বয়সীদের জন্য উপভোগ্য। স্কেটবোর্ডার, সাইক্লিস্ট, জগারস ও সৈকতপ্রেমীদের জন্য নিস বেশ আরামদায়ক।
* নিসের শতবর্ষী গির্জাগুলো এককথায় দর্শনীয়। খ্রিস্টানদের এসব ধর্মীয় স্থান দারুণভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে শতাব্দীর প্রাচীন ইউরোপীয় স্থাপত্য ও নিপুণ নকশার নজির পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতি ক্যাথেড্রাল সেন্ট রেপারেট ও ক্যাথেড্রাল সেন্ট নিকোলাস।
* পুরনো এলাকা বিজু নিসে আছে নিত্যপণ্যের বাজার ক্যুঁর্স স্যালেইয়া। এতে ভোজনরসিক ক্রেতারা পাবেন ক্যাফে, বার, রেস্তোরাঁ। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা বিভিন্ন স্টল থেকে ফল, শাকসবজি, রুটি, অলিভ অয়েলসহ দৈনন্দিনে খাবারের প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনে। প্রতি সোমবার এই বাজারে বিক্রি হয় প্রাচীন জিনিসপত্র। এছাড়া রোজ বিভিন্ন সুবাসিত ফুলের বিকিকিনি চলে।
নিসসহ ফ্রান্সের গৌরবময় অতীতের মুগ্ধকর নিদর্শন দেখা যায় বহু জাদুঘর ও গ্যালারিতে। শিল্পপ্রেমীরা পথে পথে ঘুরে এসব সাংস্কৃতিক স্থান ও মনোরম শহর উপভোগ করে মুগ্ধ হয়। নিসের বিখ্যাত কিছু জাদুঘর ও গ্যালারির মধ্যে রয়েছে ম্যাটিস মিউজিয়াম, মার্ক চাগাল মিউজিয়াম, মিউজিয়াম অব মর্ডান আর্ট অ্যান্ড কন্টেমপরারি আর্ট ও ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অব নেইভ আর্ট আনাতল ইয়াকোভস্কি। এর মধ্যে উল্লিখিত শেষ জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা ফরাসি শিল্প সমালোচক আনাতল ইয়াকোভস্কি।
নিসের সাজানো-গোছানো রাস্তায় বুটিকসসহ অনেক দোকানপাট। প্রাচীনকালের কাপড় থেকে শুরু করে হালের ট্রেন্ডসহ সব ধরনের ফ্যাশন পণ্য পাওয়া যায় এগুলোতে। কেতাদুরস্ত মনোভাব থাকলে মাই কাট কনসেপ্ট, ফ্রিপ’এন দ্য সিটি ও ইউনিক হতে পারে জুতসই।
ফ্রান্সের এই শহরে অপেরা, ব্যালে ও ক্ল্যাসিকাল কনসার্টের জন্য রয়েছে অপেরা দো নিস। ১৮৮৫ সালে চালু হয় এটি। ভিনদেশের সংস্কৃতির প্রতি কৌতূহলীদের জন্য বিশাল ভেন্যুটি উপযুক্ত। এতে প্রতি বছর সাতটি অপেরা ও ১৫টি কনসার্ট হয়ে থাকে। এসব অভিজাত সংগীতানুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক দর্শক দেখা যায়।
মন্ট গ্রোস পাহাড়ে অবস্থিত বিজ্ঞান জাদুঘর ‘অবজারভাতোয়ার দো নিস’। এতে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে আকর্ষণীয় ঝলকের পাশাপাশি শহরটির উঁচু ভবন ও চোখধাঁধানো স্তম্ভগুলো দেখা যায় অনায়াসে। এটি স্থাপত্যের রত্ন বলা চলে। পর্যবেক্ষণাগারের বহির্ভাগে আছে একটি গম্বুজ। ইতিহাসপ্রেমী ও বিজ্ঞানে আগ্রহীদের জন্য এটি অন্যতম আকর্ষণ।
নিসে রাতের সৌন্দর্য উপভোগের ইচ্ছে হয় অনেকের। শহরটিতে কম দামে বেড়াতে চাইলে কেভ দো লা ট্যুর আর বিলাসবহুল আবহের জন্য লা ভিলা আছে। এগুলোতে মিলবে ওয়াইন ও আনন্দসহ মন প্রফুল্ল রাখার আরামদায়ক পরিবেশ।
নিসে রাস্তার ধারের ক্যাফে থেকে শুরু করে বিলাসবহুল হোটেলে রেস্তোরাঁয় সামুদ্রিক খাবার, ফরাসি, ইতালিয়ানসহ বৈচিত্র্যময় খাবার পাওয়া যায় হাত বাড়ালেই। শুধু পকেটের ওজন বুঝে অর্ডার দিলেই চলবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের সারাবছর এখানে দেখা যায়।