পাঁচ মহাদেশের পর্বত জয়ের স্বপ্ন চিত্রা পাড়ের রত্নার

পাহাড়ের চূড়ায় রেশমা নাহার রত্নানড়াইল শহরের পাশ ঘেঁষে চিত্রা নদীর প্রবাহ। পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্না চিত্রা পাড়ের একজন। পেশায় শিক্ষিকা। তবে পাহাড় তার প্রেম। পাহাড়ের কোলে সাগরের কূলে কেটেছে ছোটবেলা। সেই থেকে ছোট্ট মেয়েটির মনে পাহাড় সেই যে ছাপ ফেললো! বেড়ে ওঠার সঙ্গে যেন তা পেয়ে বসলো তাকে। ২০১৬ থেকে সেই প্রেম যেন হৃদয়ের গভীরে গেঁথে গেছে। তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা গত তিন বছরে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছেন পাহাড়ের।

পর্বতারোহন ক্লাব বিএমটিসির সঙ্গে এভারেস্ট জয়ী এম এ মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পাহাড় কেওক্রাডংয়ের চূড়া স্পর্শ করার সুবাদে রত্নার নাম হয়ে যায় ‘আয়রন লেডি’। এবার শুধু হিমালয় নয়, গণিতে মাস্টার্স করা রত্না আগামী মাস থেকে পাঁচ মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্বতগুলো ছোঁয়ার অভিযাত্রা শুরু করতে চান। বাংলাদেশি হিসেবে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর ইচ্ছে আছে তার। সব চাপ অতিক্রম করে স্বপ্নপূরণের পথ বেয়ে চলায় বিশ্বাসী তিনি।

ইউরোপের ডিকটাও পাহাড় চূড়া জয়ের মাধ্যমে নতুন অভিযাত্রা শুরু করতে চান রত্না। ৫২০৫ মিটার উচ্চতা রাশিয়ার এই পাহাড় চূড়ার। এরপর একে একে আফ্রিকা, ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার্ চূড়াগুলো ছুঁয়ে দেখবেন তিনি। অর্থাৎ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া মাউন্ট কেনিয়া-ব্যাটেইন পিক (৫১৯৯ মিটার), ওশেনিয়ার সুমান্ত্রি-নাগা পুলু (৪৮৭০ মিটার), অস্ট্রেলিয়ার টাউনসেন্ড (২২০৯ মিটার) ও দক্ষিণ আমেরিকার ওজোস ডেল সালাদো (৬৮৯৩ মিটার) চূড়া স্পর্শ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই পর্বতারোহী।

পাহাড়ে উঠছেন রেশমা নাহার রত্নাশারীরিক সক্ষমতা তৈরিতে ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশিতে অবস্থিত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিংয়ে পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন রত্না। নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্বতারোহন বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ফুরসত পেলেই পাহাড়ের কোলে ছুটে যাওয়া তার ধ্যানজ্ঞান। এজন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা।

পর্বতের চূড়ায় রেশমা নাহার রত্নাজাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আদর্শ মেনে সামনে এগিয়ে চলা রত্না কোনও বাধাকে বাধা মনে করেন না। তার বিশ্বাস, নিজের এলাকার সংসদ সদস্য মাশরাফি পাশে দাঁড়াবেন। এছাড়া অভিযাত্রা বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রযাত্রায় কাজ করা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস তার।

বাবা এস আফজাল হোসেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বীরবিক্রম। যোদ্ধার মেয়ে রত্না বিশ্বাস করেন, অবিশ্বাস্য অনেক বাধা পেরিয়ে দেশকে আলোকিত করতে পারবেন।