ট্রাভেলগ

রাতে ঘুরে বেড়ানো প্রকৃতিপ্রেমীদের নিশিদল

নিশিদলের দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীরাপ্রকৃতিপ্রেমী মানুষ সাধারণত দিনের বেলা বেড়ানো উপভোগ করেন। কিন্তু একদল ভ্রমণপিপাসু আছেন যারা রাতের আলোয় প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার মাঝে স্বস্তি খুঁজে নেন। ব্যতিক্রম এই পর্যটকদের ‘নিশিদল’ নামে সংগঠন আছে। তারা রাতেই দেখেন নদ-নদী, সাগর, হাওর, আকাশ, বন-জঙ্গলসহ বাংলার প্রকৃতি।

একবার রাতে নিশিদলের কয়েকজন মিলে উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাত যখন গভীর, তখন শেয়াল দলের আক্রমণের মুখে পড়েন তারা। তড়িঘড়ি আগুন জ্বালালেন সবাই। এ কারণে শেয়ালের দল পিছু হটে যায়।

আরেকদিন নিশিদলের সফর ছিল ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। সেখানে তাদের এক সদস্যকে চিতই পিঠার সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়েছিল। সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা জামিল জাহাঙ্গীর জানান, রাতের ভ্রমণে এমন কিছু ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। 

সম্প্রতি রাজধানী ছেড়ে নিশিদলের গন্তব্য ছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। এটি তাদের ৫২তম জেলা সফর। লক্ষ্মীপুরের মতিরহাট মেঘনাপাড়ে বেড়িয়েছেন তারা। তবে তারা লক্ষ্মীপুরে আসতেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় কালবৈশাখীর ঝড়। এরপর শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিশিরাতে নিশিদল পৌঁছায় মেঘনার তীরে। গল্প, আড্ডা ও প্রকৃতি দেখার মধ্য দিয়েই কেটেছে তাদের রাত। সকালবেলা স্থানীয়দের সঙ্গে গল্প করে ফিরে আসে নিশিদল।

খাগড়াছড়িতে নিশিদলের প্রকৃতিপ্রেমীরানিশিদল একটি ভ্রমণ সংগঠন। এর যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। আয়োজন করে অথবা কোনও আয়োজন ছাড়াই রাত দেখতে বেরিয়ে পড়ে এই দলের নিশাচরেরা। নিশিদলের সদস্য এখন ৫৪ জন। তাদের মধ্যে প্রবাসীও আছেন। চীন, তাইওয়ান, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার সদস্যরা দেশে এসে রাতে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতি উপভোগ করেন।
রাতে প্রকৃতি দেখার ভাবনা এলো কীভাবে? সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শাহ মোহাম্মদ মোশাহিদ বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমরা মেসে থাকতাম। অনেক রাত হয়ে যেতো। এই রাত জাগার অভ্যাস তখন থেকেই। এরপর কর্মজীবনে এসে রাত জাগার ওই সময়টাকে মিস করছিলাম। আমার বন্ধু রুমান ও তুহিনের সঙ্গে রাতে বেড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। মানুষ বিপদে না পড়লে রাত জাগে না। সেক্ষেত্রে আমরা একদম ব্যতিক্রম একটি কাজ শুরু করি। রাতে পাহাড়, সাগর ও নদীর দৃশ্য অন্যরকম। এই যে প্রকৃতির মাঝে বৈচিত্র্য লুকিয়ে আছে, সেটা উপভোগ করতে চেয়েছি আমরা। এজন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া। আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে।’

নিশিদলের প্রকৃতিপ্রেমীরারাতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যাপারে কেমন প্রস্তুতি থাকে জানতে চাইলে জামিল জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যেখানে আমরা বেড়াতে যাই, অতি প্রয়োজন হলে সেখানকার প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই। মূলত নিশিদল যেখানেই ভ্রমণে বের হোক না, স্থানীয়দের সঙ্গে হৃদ্যতা হয়ে গেলে নিরাপত্তা আপনাআপনি এসে যায়।’

ছবি: লেখক