৫ টাকার নোটের কুসুম্বা মসজিদ দেখার ইচ্ছেপূরণ

কুসুম্বা মসজিদের সামনে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীখেয়াল করেছেন? পাঁচ টাকার নোটে একটি মসজিদের ছবি আছে। এর নাম কুসুম্বা মসজিদ। নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরে গেলেই চোখে পড়বে এটি। মান্দা উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত মুসলিম স্থাপত্যের এই অপূর্ব নিদর্শন। এবারের ঈদের ছুটিতে কুসুম্বা মসজিদ দেখার ইচ্ছেপূরণ করেছেন অনেক দর্শনার্থী। 

প্রতি বছর ঈদের কয়েকদিন কুসুম্বা মসজিদ দর্শনে আসেন হাজারও নারী-পুরুষ। কুড়িগ্রাম থেকে আসা চার বন্ধুর অনুভূতি, ‘আমরা বন্ধুরা সময় পেলেই বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান দেখতে বেরিয়ে পড়ি। এখানে না এলে জানতে পারতাম না এত সুন্দর একটি মসজিদ আমাদের দেশে আছে। এককথায় অসাধারণ। মসজিদ লাগোয়া বিশাল দীঘি দেখে মুগ্ধ আমরা।’
মান্দা কুসুম্বা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জানালেন, ঈদকে ঘিরে কয়েকদিন পর্যন্ত দর্শনার্থীদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। স্থাপত্যটির চারপাশে গ্রামীণ মেলাকে ঘিরেও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
১৫৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের রাজত্বকালে সুলতান সোলায়মান নামের এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। সেই হিসাবে ৪৬১ বছরের ইতিহাস বহন করে চলছে এটি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ ফুট ৬ ইঞ্চি, প্রস্থ প্রায় ৪৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। ছয় গম্বুজের কুসুম্বা মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার হয়েছে মূল্যবান কালো পাথর। গম্বুজগুলো পিলারের ওপর স্থাপিত। পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ খাঁজকাটা খিলান যুক্ত। মাঝের প্রবেশ পথের ওপর প্রস্তর ফলকে একটি আরবি ভাষায় লিপি উৎকীর্ণ আছে। এই মসজিদে মহিলারাও নামাজ পড়তে পারেন।

পাঁচ টাকার নোটের এ-পিঠ ও-পিঠমসজিদের সামনে রয়েছে প্রায় ৭৭ বিঘা আয়তনের বিশাল দীঘি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ২৫০ ফুট, প্রস্থ প্রায় ৯০০ ফুট। মন শীতল করা স্বচ্ছ জলের দীঘিটি সুগভীর। কথিত আছে, তলদেশে পারদ মিশ্রিত থাকায় পানিতে কচুরিপানা বা অন্য কোনও আগাছা জন্মাতে পারে না। দীঘিতে নামার জন্য রয়েছে দুটি দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি। এখানে মুসল্লিরা অজু করেন।
কুসুম্বা মসজিদের পশ্চিম পাশে প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত সোনা দীঘি। অনেক দর্শনার্থীর কাছে এটি অজানা। তারা কুসুম্বা মসজিদ ও দীঘি দেখেই চলে যান। কথিত আছে, সুলতান আলাউদ্দীন হোসাইন শাহের আদরের কন্যা ছিলেন সোনা। অকালে তার মৃত্যু হলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সুলতান। তার মেয়ের স্মৃতিতে খনন করা হয় ‘সোনা দীঘি’।
মসজিদের সামনে অনেককে দেখা যায় সপরিবারে। নাটোর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আলতাফ হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঁচ টাকার নোটে এই মসজিদ দেখে এখানে আসার ইচ্ছে ছিল। তাই ঈদের পরদিন পরিবার নিয়ে এসেছি। এত সুন্দর একটা মসজিদ, অথচ এখানে পর্যটকদের জন্য কোনও সুযোগ-সুবিধা চোখে পড়েনি। এমনকি ভালো মানের খাবার হোটেলও নেই।’
একই হতাশা রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা সিদ্দিকুর রহমানের মুখে, ‘এখানে খাবারের মানসম্মত কোনও হোটেল নেই। আবাসিক সু-ব্যবস্থারও খুব অভাব। এ কারণে আমরা যারা বহুদূর থেকে এসেছি তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’ 

কুসুম্বা মসজিদের পাশে বসেছে গ্রামীণ মেলাপর্যটকদের সুবিধার্থে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান। কিছুদিনের মধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবেন তারা। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে মসজিদকে ঘিরে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও কিছু উন্নয়ন কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি।’