এমনই একটি স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ। পঞ্চগড়ের আটোয়ারির মির্জাপুরে এটি অবস্থিত। দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে সমৃদ্ধ করেছে এই মসজিদ। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজখচিত মার্বেল পাথরের শৈল্পিক স্থাপনাটির নির্মাণ প্রসঙ্গে রয়েছে ভিন্ন মত।
ঐতিহাসিকদের অভিমত, মোগল আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় মির্জাপুর শাহী মসজিদ। কারও কারও ধারণা, মির্জাপুর গ্রামের মালিক উদ্দিন এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কেউ কেউ মনে করেন, দোস্ত মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। তবে মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন, ১৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে এটি গড়ে তোলা হয়।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মির্জাপুর শাহী মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ২৫ ফুট। দেয়ালে টেরাকোট ফুল ও লতাপাতার বিভিন্ন খোদাই করা নকশা আছে, যা মূলত লাল ও সাদা রঙের কালি দিয়ে করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ মসজিদ তিন ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা। এতে প্রবেশের তিনটি বড় দরজা আছে। প্রধান দরজার ঠিক সামনেই একটি তোরণ। সেটি অতিক্রম করে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। প্রধান দরজার ঠিক ওপরেই ফরাসি ভাষায় লিখিত কালো বর্ণের একটি ফলক ও ফলকের লিপি। ভাষা থেকে অনুমান করা যায়, মসজিদটি মোগল সম্রাট শাহ আলমের শাসনমালে নির্মিত। এছাড়া ১৬৭৯ সালে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে নির্মিত মসজিদের সঙ্গে এর অনেকাংশে মিল পাওয়া যায়। সেটিও মোগল আমলে নির্মিত।
শাহী মসজিদের সামনের অংশে নামাজ পড়ার জন্য কিছু জায়গা রাখা হয়েছে। প্রায় ৩৬৩ বছরের পুরনো এই মসজিদে এখনও নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হয়। মসজিদের ঠিক পাশেই একটি মাদ্রাসা ও মক্তব। যেখান থেকে ভেসে আসে পবিত্র কোরআনের মিষ্টি সুর।
ঢাকা থেকে দিনরাত বাসে সরাসরি আটোয়ারি যাওয়া যায়। সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর। ব্যাটারিচালিত অটোতে চড়ে মির্জাপুর বাজারে পৌঁছে ভ্যানে উঠতে হবে। এক কিলোমিটার পরে পূর্ব দিকে মির্জাপুর শাহী মসজিদ।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে দিনাজপুর পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে আটোয়ারি রেলস্টেশন হয়ে বাস বা ব্যাটারিচালিত অটোতে চড়ে মির্জাপুর যেতে হবে। তারপর ভ্যানে উঠে মির্জাপুর শাহী মসজিদ।
কোথায় থাকবেন
পঞ্চগড় শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এগুলোতে এসি/নন-এসি সিঙ্গেল বা ডাবল কক্ষ পাওয়া যায়। ভাড়া ১২০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।
ছবি: লেখক