তনুর মৃত্যুর কারণ জানার কি উপায় নেই?

তনু হত্যাকাণ্ডপ্রথম ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ জানতে না পারায় দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয় সোহাগী জাহান তনুর লাশের। কিন্তু দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের পরও হত্যার কারণ জানতে পারেননি সংশ্লিষ্ট  চিকিৎসকরা। তাহলে তনুর মৃত্যুর কারণ জানার কি উপায় নেই? সংশ্লিষ্ট ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ময়নাতদন্তের মাধ্যমে এই মৃত্যুর কারণ জানার আর কোনও উপায় নেই। জানতে হলে এখন পুলিশের অধিকতর তদন্তের ওপরই নির্ভর করতে হবে।
গত ২০ মার্চ দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন প্রথম মেয়ের লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার কাছ থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ২১ মার্চ তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত করা হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। গত ৪ এপ্রিল ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শারমিন সুলতানা। পরে তনুর ময়নাতদন্তকারী বোর্ড ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা ওইদিন সাংবাদিকদের জানান, তনুকে হত্যার আগে দুর্বৃত্তরা ধর্ষণ করেছে এমন কোনও আলামত ময়নাতদন্তে পাওয়া যায়নি। এমনকি মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ সম্পর্কেও তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।

এরইমধ্যে ২৮ মার্চ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, সুরতহাল তৈরি ও পুনরায় ময়নাতদন্ত করতে কবর থেকে তনুর লাশ তোলার নির্দেশ দেন কুমিল্লার আদালত। আদালতের নির্দেশে গত ৩০ মার্চ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়ির কবরস্থান থেকে তনুর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। নানা জটিলতা ও বিতর্ক শেষে রবিবার দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। এ প্রতিবেদনে কারণ জানা না গেলেও মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল বলে জানান ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন প্রথম ময়নাতদন্তের মতো দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এদিকে, তনুর মা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও মিথ্যা।  

দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. কামদা প্রসাদ সাংবাদিকদের জানান, মৃত্যুর ১০ দিন পর লাশের ময়নাতদন্ত করায় তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা,  শনাক্ত করতে পারেনি মেডিক্যাল বোর্ড। কারণ ততদিনে তার শরীর পচে গেছে। তাই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এখন মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য পুলিশকে অধিকতর তদন্তসহ পারিপার্শ্বিক তদন্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। তবে মৃত্যুর আগে তনুর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।

তাহলে তনুর মৃত্যুর কারণ জানার আর কোনও উপায় নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিবুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ অনেক সময়েই পাওয়া যায় না। দুই থেকে সাত ভাগ রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এ মৃত্যুর কারণ আর জানা যাবে না। এটা সবসময়ের জন্য নেগেটিভ হয়ে গেল। পারিপার্শ্বিকতার কারণে হয়তো কারণটা বের হয়ে আসেনি।

হাবিবুজ্জামান বলেন, ধর্ষণ যে হয়েছে, এটা যেহেতু বের হয়ে আসছে, সেক্ষেত্রে হত্যার বিষয়টি খুবই কমন বিষয়। মৃত্যুর ধরনতো বোঝা গেছে। তাই কারণের আর দরকার কী? ধরনই যদি জানা যায়, তাহলে কারণের খুব একটা প্রয়োজন হয় না।

তনুর মৃত্যুর কারণ জানতে না পারার বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কারণ জানা যাবে না, তা নয়। কিন্তু প্রথম ডাক্তার যেহেতু জানতে পারেননি, সেহেতু দ্বিতীয় ডাক্তারের জানা তো আরও কষ্টকর। কারণ লাশ পচেতো আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তার মৃত্যুর কারণ জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে পুলিশের অধিকতর তদন্ত। পুলিশকে তদন্ত করেই এর কারণ বের করতে হবে। 

হত্যাকাণ্ডের ৮৪ দিন পার হলেও এখনও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতির কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। মাঝে গত ১৬ মে ডিএনএ প্রতিবেদনে তনুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার খবরে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তবে তনু হত্যাকাণ্ডের সার্বিক তদন্তে দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতির তথ্য দিতে পারেননি সিআইডি’র কর্মকর্তারা।

তনু হত্যা মামলার তদন্তের বিষয়ে তদন্ত সহায়ক কমিটির প্রধান সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে চাননি। তবে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছেন তারা। দ্রুত একটি সমাধানে আসা যাবে বলেও তিনি সাংবাদিকদের বলেন।

আরও পড়তে পারেন: দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মিথ্যা: তনুর মা

/এমএনএইচ/