‘আমার স্বামীর সন্ধান চাই’

রবিবার সুপ্রিম কোর্টে সাতক্ষীরার নিখোঁজ জনির স্ত্রী জেসমিন নাহারসাতক্ষীরার নিখোঁজ পল্লী চিকিৎসক মোকলেসুর রহমান জনির সন্ধান চেয়েছেন তার স্ত্রী জেসমিন নাহার। স্বামীর সন্ধান চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে জেসমিন বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের বাবার সন্ধান চাই। সে যেন তার বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারে। আমার স্বামীকে ফেরত চাই।’ সরকারের কাছে এ আবেদন রেখে রবিবার (১৬ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘স্বামীর সন্ধান চেয়ে অনেকের কাছে আবেদন করেছি। পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেক রাজনৈতিক নেতার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কিন্তু তার কোনও সন্ধান পাইনি। সর্বশেষ, বাধ্য হয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’

গত বছরের আগস্টে সাতক্ষীরার সদর থানা থেকে নিখোঁজ হন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শেখ মোখলেছুর রহমান জনি। স্বামীর সন্ধান চেয়ে পুলিশসহ অনেক জায়গায় ঘুরে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে রিট করেন জেসমিন। এর মধ্যে জনির নিখোঁজের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তও হয়। তারপরও তার সন্ধান মেলেনি। রবিবার আদালত ফের তদন্তের মাধ্যমে জনিকে খুঁজে বের করতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (পিবিআই) দিয়ে এ পুনঃতদন্ত করাতে বলেছেন আদালত।

রবিবার সুপ্রিম কোর্টে সাতক্ষীরার নিখোঁজ জনির স্ত্রী জেসমিন নাহারএ রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জেসমিন। এ সময় তিনি বলেন,‘২০১৬ সালের ৪ আগস্ট আমার স্বামী নিখোঁজ হন। ওই সময় আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। এখন আমার মেয়ের বয়স ছয় মাস। ছয় মাসের সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। কোথাও আমার স্বামীর কোন খোঁজ পাইনি।’ আবেগতাড়িত হয়ে জেসমিন বলেন,‘আমার সন্তানের কাছে তার বাবাকে ফিরিয়ে দেন। আমার মেয়ে এখনও তার বাবাকে দেখতে পায়নি।’ 

জেসমিন জানান, নিখোঁজের পরদিন ৫ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানায় গিয়ে হাজতখানায় জনিকে দেখতে পান। কেন তাকে আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে ওই থানার এসআই হিমেল বলেন, জনি অপরাধী কিনা—তা এখনই বলা যাবে না। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেলে তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে আর নির্দোষ হলে ছেড়ে দেওয়া হবে। জেসমিন বলেন, ‘এরপর তিনদিন আমার স্বামীকে থানায় আটকে রাখা হয়। আমরা প্রতিদিন তাকে খাবার দিয়ে আসতাম। চতুর্থদিন যখন আবার যাই,তখন পুলিশ বলে, “জনি থানায় নেই, কোথায় গেছে তা আমরা জানি না। তাকে আমরা গ্রেফতার করিনি।” এরপর আমি ওসি, এসপিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু কোথাও কোন সাড়া পাইনি। পরে ২৪ আগস্ট আমি পুলিশ সুপারের কাছে  দরখাস্ত করি। সংবাদ সম্মেলনও করি। এর আগে থানায় জিডি করতে গেলেও তা নেয়নি পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনের পর আমি হাইকোর্টে রিট করি। আদালত বিষয়টি নিয়ে আদেশ দেন।’

এমটি/এএম/