পুলিশ সদর দফতর ও সিটিটিসি ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের দেশে জেএমবি ও নব্য জেএমবির কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ মাহফুজের মতো শীর্ষ জঙ্গি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এলাকায় অবস্থান করে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে। গ্রেফতারের পর সোহেল মাহফুজ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদের শিমুলিয়া মাদ্রাসায় তাদের একটি ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল। ওই মাদ্রাসায় সে শতাধিক সদস্যকে জেএমবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তারা এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী। যেন দেশে গিয়ে তাদের বিষয়ে নজরদারি ও আইনের আওতায় আনা যায়।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। পারস্পারিক তথ্য বিনিময় হয়েছে। জঙ্গি ও সোহেল মাহফুজ নিয়ে তাদের বেশি আগ্রহ। কারণ সে দীর্ঘ দিন ভারতে ছিল। সে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের সঙ্গেও জড়িত। এ কারণে ভারতে ওরা কতটা সংগঠিত হয়েছিল তা জানতে চেয়েছে। আমাদের কাছে থাকা যতটুকু তথ্য শেয়ার করা যায় তা আমরা করেছি।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের কমন কিছু বিষয় নিয়েও আমাদের কথা হয়েছে। কোথায় নজরদারি বাড়াতে হবে বা কার ওপর নজরদারি করতে হবে, এটা ওদের পক্ষ থেকে যেমন বলেছে, আমরাও কিছু কিছু বিষয় জানার চেষ্টা করেছি।’
সিটিটিসি সূত্র জানায়, ভারতের স্পেশাল টাস্কফোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গিদের একটি তালিকাও বিনিময় করা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে যেসব জঙ্গিরা ভারতে গিয়ে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে তাদের বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ভারতে জেএমবির পাশাপাশি নব্য জেএমবি কোনও আস্তানা গেড়েছে কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর করা হয়েছে।
সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে নব্য জেএমবির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ভারতে গিয়ে অবস্থান করছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আগে জঙ্গিরা ভারতে আত্মগোপনে থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলার পরিকল্পনা করতো। কিন্তু সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের পর তারা জানতে পারেন, জেএমবি তাদের ভারতীয় শাখা খুলে সেখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জেএমবির ভারতীয় শাখার আমিরের দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়া এই সময়ে সে শতাধিক ব্যক্তিকে জেএমবিতে যুক্ত করে সামরিকসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সিটির দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা বলেন, জেএমবি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বীরভূম এলাকাসহ আসাম ও ঝাড়খণ্ডেও তাদের কার্যক্রম চালায়। এছাড়া সোহেল মাহফুজ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সে সাংগঠনিক কাজে চেন্নাই ও উত্তর প্রদেশেও বিভিন্ন সময় ভ্রমণ করেছে। এ কারণে জেএমবি ভারতে ভালোভাবেই যে সংগঠিত হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন সিটির কর্মকর্তারা। এমনকি নব্য জেএমবির একটি দল ভারতে তাদের শাখা খোলার চেষ্টা করছে বলেও তথ্য রয়েছে।
সোমবার ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার যে দলটি আসবে, সে দলের সঙ্গেও একই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
/এমএনএইচ/আপ-এআর/