মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে আটকাবস্থার বর্ণনা দিলেন আদিলুর রহমান

আদিলুর রহমান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)২০ জুলাই ভোরে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে পৌঁছান মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান। নিয়ম অনুযায়ী ইমিগ্রেশন ডেস্কে পাসপোর্ট দেন তিনি। তখন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ডাটাবেজ চেক করার পর দুই শব্দ লেখা একটা কাগজ দেন তাকে। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন এতে লেখা ছিল ‘সন্দেহজনক’। শনিবার (২২ জুলাই) সকাল ১১টায় রাজধানীর গুলশানে অধিকার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে আটকাবস্থার এমন অনেক ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি।

মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে আটকের পর কেন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলো তার প্রকৃত কারণ জানেন না বলে দাবি করেছেন আদিলুর রহমান খান। বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও অনেক বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পরও বিমানবন্দরে আটকে রেখে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘এন্টি ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্কের (এডিপিএএন) দ্বিতীয় সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৯ জুলাই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ২০ জুলাই ভোরে ওখানে পৌঁছার পর আমাকে আটক করা হয়। এরপর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আমাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু কি কারণে আমাকে আটক করে এরপর ফেরত পাঠানো হয়, এর প্রকৃত কারণ এখনও জানি না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে মালয়েশিয়ান ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন।’

সংবাদ সম্মেলনে আদিলুর রহমান আরও জানান, বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিয়ে পাশের একটি কক্ষে অন্য একজন কর্মকর্তার কাছে যাচাইয়ের জন্য তা জমা দিতে বলেন। পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর অপেক্ষা করতে বলা হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অন্য একজন কর্মকর্তা তাকে অনুসরণ করতে বলে নিয়ে যান বিমানবন্দরের অন্যপ্রান্তে। যাওয়ার পথে এডিপিএএন-এর একজন সমন্বয়ককে তিনি ই-মেইল করে জানান— ‘আমাকে বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না এবং সম্ভবত আমাকে আটক করা হবে।’ মুহূর্তেই উত্তর আসে। এরই মধ্যে সমন্বয়কের মালয়েশিয়ান সহকর্মীকে ফোন করলে তিনি জানান, অবিলম্বে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে।

আদিলুর রহমান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে এই মানবাধিকার কর্মী আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরের অন্যপ্রান্তে আমার মোবাইল ও ল্যাপটপসহ সব জিনিস সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর আমাকে নেওয়া হয় একটি বড় কক্ষে। যেখানে প্রায় ৬০ জন ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন বাংলাদেশি। বাকিরা ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিস্তিন ও ইরানের। প্রায় এক ঘণ্টা এই কক্ষে থাকার পর বের করে আমার কাছ থেকে ১০০ ডলার নেওয়া হয়। বিনিময়ে দেওয়া হয় দুটি বিস্কিট, এক বোতল পানি, একটি টুথব্রাশ, টুথপেস্ট ও সাবান। যাদের কাছে অর্থ নেই তারা ট্যাপের পানি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছেন।’

এভাবে চলার পর দুপুরের দিকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে আদিলের কাছে জানতে চান, এই আটকাবস্থার কথা বাইরে কাউকে জানিয়েছেন কিনা। তিনি বিষয়টি স্বীকার করলে ওই পুলিশ জোরে বলে উঠেন, ‘কেন আপনি এটা করেছেন?’ কিছুক্ষণ পর আরেকজন কর্মকর্তা এসে জানান, ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন থেকে তার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল ফোনে একটি ছবিও তুলে নেন ওই কর্মকর্তা।

কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের অন্যপ্রান্তের কক্ষটিকে ‘বন্দিশালা’ উল্লেখ করে আদিলুর রহমান বলেন, ‘বিমানবন্দরের এই বন্দিশালা বেসরকারিভাবে পরিচালিত। দুপুরের পর একজন কর্মকর্তা এসে আমাকে ৬ ফুট বাই ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে আমার দেওয়া অর্থের বিনিময়ে দুপুরের খাবার ও এক কাপ চা দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমাকে সেখানে আটক রাখা হয়। এরপর প্রথমে যে কক্ষে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল সেই কক্ষে নিয়ে হিউম্যান রাইটস কমিশনের দুই প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের পুরো বিষয়টা জানাই। এরই মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকাগামী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আমাকে তুলে দেওয়া হয়। তবে পাসপোর্ট দেওয়া হয় একজন ক্রু মেম্বারের কাছে। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছালে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ইমিগ্রেশন পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর পাসপোর্ট ফেরত পেয়ে বিমানবন্দর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসি।’

আদিলুর রহমান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)আটক ব্যক্তিদের কাছে বৈধ ভিসা থাকার পরও মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে অধিকার-এর সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন তোলেন অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে। তার মন্তব্য, ‘ভিসা থাকার পরও মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না দিয়ে বন্দিশালায় আটকে রেখে বাংলাদেশিদের উল্টো দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের অভিবাসন মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?’

/আরজে/জেএইচ/