মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে আটকের পর কেন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলো তার প্রকৃত কারণ জানেন না বলে দাবি করেছেন আদিলুর রহমান খান। বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও অনেক বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পরও বিমানবন্দরে আটকে রেখে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘এন্টি ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্কের (এডিপিএএন) দ্বিতীয় সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৯ জুলাই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ২০ জুলাই ভোরে ওখানে পৌঁছার পর আমাকে আটক করা হয়। এরপর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আমাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু কি কারণে আমাকে আটক করে এরপর ফেরত পাঠানো হয়, এর প্রকৃত কারণ এখনও জানি না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে মালয়েশিয়ান ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন।’
সংবাদ সম্মেলনে আদিলুর রহমান আরও জানান, বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিয়ে পাশের একটি কক্ষে অন্য একজন কর্মকর্তার কাছে যাচাইয়ের জন্য তা জমা দিতে বলেন। পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর অপেক্ষা করতে বলা হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অন্য একজন কর্মকর্তা তাকে অনুসরণ করতে বলে নিয়ে যান বিমানবন্দরের অন্যপ্রান্তে। যাওয়ার পথে এডিপিএএন-এর একজন সমন্বয়ককে তিনি ই-মেইল করে জানান— ‘আমাকে বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না এবং সম্ভবত আমাকে আটক করা হবে।’ মুহূর্তেই উত্তর আসে। এরই মধ্যে সমন্বয়কের মালয়েশিয়ান সহকর্মীকে ফোন করলে তিনি জানান, অবিলম্বে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে।
এভাবে চলার পর দুপুরের দিকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে আদিলের কাছে জানতে চান, এই আটকাবস্থার কথা বাইরে কাউকে জানিয়েছেন কিনা। তিনি বিষয়টি স্বীকার করলে ওই পুলিশ জোরে বলে উঠেন, ‘কেন আপনি এটা করেছেন?’ কিছুক্ষণ পর আরেকজন কর্মকর্তা এসে জানান, ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন থেকে তার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল ফোনে একটি ছবিও তুলে নেন ওই কর্মকর্তা।
কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের অন্যপ্রান্তের কক্ষটিকে ‘বন্দিশালা’ উল্লেখ করে আদিলুর রহমান বলেন, ‘বিমানবন্দরের এই বন্দিশালা বেসরকারিভাবে পরিচালিত। দুপুরের পর একজন কর্মকর্তা এসে আমাকে ৬ ফুট বাই ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে আমার দেওয়া অর্থের বিনিময়ে দুপুরের খাবার ও এক কাপ চা দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমাকে সেখানে আটক রাখা হয়। এরপর প্রথমে যে কক্ষে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল সেই কক্ষে নিয়ে হিউম্যান রাইটস কমিশনের দুই প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের পুরো বিষয়টা জানাই। এরই মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকাগামী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আমাকে তুলে দেওয়া হয়। তবে পাসপোর্ট দেওয়া হয় একজন ক্রু মেম্বারের কাছে। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছালে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ইমিগ্রেশন পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর পাসপোর্ট ফেরত পেয়ে বিমানবন্দর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসি।’
/আরজে/জেএইচ/