ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানের সময় গাড়ির ভেতরে কে আছেন, সেটা তারা দেখবেন না। আইন ভাঙলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা জানান, উল্টোপথে গাড়ি চলাচলের অভিযোগে গত জানুয়ারি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৬৫৫টি মামলা দায়ের করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। ২৫ সেপ্টেম্বর দায়ের করার মামলার হিসাব এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সোমবার রাত সাড়ে নয়টা) পাওয়া যায়নি।
ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, আইন লঙ্ঘনের কারণে তারা বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু যখন পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি উল্টোপথে চলে, তখন তারা অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েন। উল্টোপথে গাড়ি চলার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া সাধারণ মানুষ এ নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করতে থাকে। কিন্তু এখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই এ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে তাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। এভাবে অভিযান অব্যাহত থাকলে উল্টোপথে গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে যাবে।
রবিবার রাজধানীর হেয়ার রোডে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর অপরাধে মামলা হয়েছিল পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানার গাড়ির বিরুদ্ধে। সোমবার বিকালে আবারও উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে বাংলামোটরে ধরা পড়েন সেই গাড়ির চালক বাবুল মোল্লা। বাংলামোটরে তার গাড়ি আটকানো হলে বাবুল মোল্লা ট্রাফিক পুলিশের ওপর ক্ষেপে যান। তার প্রশ্ন, নতুন কোনও আইন হয়েছে কিনা। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম কমিশনার মফিজউদ্দিন আহমেদ, উপ-কমিশনার রিফাত আহমেদ শামীমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্টোপথে গাড়ি চলাচলের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাড়ির ভেতরে কে আছেন, সেটা আমরা দেখব না। দেখিও না। আইন ভাঙলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়ি দাঁড় করিয়েছি, মামলা করেছি। ভেতরে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলিনি। যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।’ সোমবার পুলিশের এসপি পদ মর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তার গাড়ির বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্টো পথ দিয়ে চলার কারণে সোমবার যেসব যানবাহন ও মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। যানবাহনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই সরকারি। গাড়িগুলোর মধ্যে ছিল দুটি পাঁজেরো ও তিনটি মাইক্রোবাস। রবিবার উল্টো পথে চলার কারণে ৫৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও সাতটি গাড়ির কাছ থেকে রেকার বিল আদায় করা হয়। যার মধ্যে ৪০টিরও বেশি ছিল সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। ওইদিন প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারক ও ব্যবসায়ীদের গাড়িও ছিল। ওই অভিযানে পুলিশ কর্মকর্তারা ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট লাখ ২৪ হাজার ১৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে হাইড্রোলিক হর্নের জন্য ২৫ হাজার ৭৪৯টি, হুটার ও বিকন লাইটের জন্য দুই হাজার ১৯৯টি, উল্টোপথে চলাচলের অভিযোগে ৬৯ হাজার ৬৫৫টি, স্টিকারের জন্য ২৫৩টি, কালো গ্লাসের জন্য এক হাজার ৫৮০টি, মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৫১টি মামলা দায়ের করা হয়। বাকি মামলাগুলো অন্যান্য অভিযোগে করা হয়েছে। এসব মামলায় জরিমানা আদায় করা হয় ৩৯ কোটি ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৩৫ টাকা।
আরও পড়ুন: উল্টোপথে চালিয়ে ধরা খেলেন মন্ত্রী-সচিবের গাড়িচালকরা