কাপ্তাই লেকের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।
শনিবার (৫ মে) রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবীদের মাঝে ভিজিএফ (চাল) বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দীপংকর তালুকদার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আলমগীর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড.জুলফিকার আলী, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বক্তব্য রাখেন।
আব্দুর রহমান বলেন, কাপ্তাই লেক তার সেই আগের সৌন্দর্য, রূপে নেই। এটি যেন নুইয়ে পড়েছে। তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা কাপ্তাই লেকের আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে চাই। এই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু মৎস্যজীবীদেরই নয়, এলাকার সর্ব সাধারণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
জেলেদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আগামী তিন মাস আপনারা লেকে মাছ ধরবেন না। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত মশারি জাল, বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জাল এগুলো ব্যবহার করবেন না। জাটকাসহ ছোট মাছ ধরবেন না। আপনারা নিজ সন্তানকে যেমন পরিপূর্ণ করে গড়ে তোলেন তেমনি মাছকেও বড় হতে দিতে হবে। শুধু মন্ত্রী হিসেবেই নয়, একজন নাগরিক হিসেবেও কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে যা যা করা দরকার সব কিছুই করা হবে বলে তিনি এ সময় জানান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, আপনাদের লেকের মাছ আপনারাই ধরবেন। অন্য এলাকা থেকে কেউ এসে এই মাছ ধরবে না। সুতরাং এই লেকের ব্যবস্থাপনায় আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাপ্তাই লেক নিয়ে প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে এ সময় তিনি জানান।
আব্দুর রহমান আরও বলেন, রাঙামাটির বতর্মান ফিস ল্যান্ডিং সেন্টারটি সংস্কার করে আধুনিক ও উন্নত মানের ফিস ল্যান্ডিং স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
কৃষি জমিতে ব্যবহার করা কীটনাশকের ফলে মাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে ফসলের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মন্ত্রী। তবে কেউ যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করে তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
জেলেদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা যাতে বংশ পরম্পরায় কাপ্তাই লেকের মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় তিনি কাপ্তাই লেকে পোনা অবমুক্ত করেন এবং জেলেদের মাঝে ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধকালীন সময়ে মৎস্যজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়ে, সে জন্য সরকার নিবন্ধিত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণের জন্য ২০১০ সালে প্রথমে ২ হাজার ৫০৮ জন মৎস্যজীবী পরিবারকে খাদ্য সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হয়। কোনও প্রকৃত মৎস্যজীবী যাতে সরকারের এ বিশেষ সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য প্রতি বছর জেলেদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে ২৬ হাজার ৮৬৬ জন জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ বছর ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই লেকে সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকবে।