এক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর কাকরাইল ও বাড্ডায় জোড়া খুনের দু’টি ঘটনায় পারিবারিক দ্বন্দ্বকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা পারিবারিক কলহের জের ধরেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দু’টি ঘটেছে বলে ধারণা করছেন। সেই অনুযায়ী তদন্ত করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘দু’টি হত্যাকাণ্ডেই পারিবারিক দ্বন্দ্বকে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই মামলা দু’টির রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রমনা থানাধীন কাকরাইলের ৭৯/এ আঞ্জুমান মফিদুল রোডের মায়াকানন নামে একটি ছয় তলা ভবনের পঞ্চম তলার নিজ বাসায় ছুরিকাঘাতে নিহত হন শামসুন্নাহার করিম। ওই ভবনেরই চারতলার সিঁড়িতে গলা কেটে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় তার ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওনকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পেশায় ব্যবসায়ী ও সিনেমা জগতের প্রযোজনা-পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আব্দুল করিম তিনটি বিয়ে করেছিলেন। নিহত শামসুন্নাহার তার প্রথম স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। চার বছর আগে শারমিন আক্তার মুক্তা নামে আরেক তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। মুক্তা টেলিভিশন ও সিনেমায় অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মুক্তাকে বিয়ে করার পর করিমের প্রথম পরিবারের সঙ্গে মুক্তার সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বে মুক্তার ভাই আলামিন ওরফে জনি জড়িত। মুক্তাকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও জনিকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। মামলার এজাহারেও আব্দুল করিম, শারমিন আক্তার মুক্তাসহ জনির নামও উল্লেখ করা হয়েছে।’
মামলার বাদী নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী এজাহারে অভিযোগ করেছেন, তার বোনজামাই আব্দুল করিম তৃতীয় বিয়ের পর থেকে তার বোনকে মারধর করতো। তিন-চার মাস আগেও তৃতীয় স্ত্রী মুক্তাসহ তার বাসায় গিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পারিবারিক কলহ ছাড়াও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’
এদিকে বাড্ডায় বাবা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় নিহত জামিল শেখের স্ত্রী আরজিনার পরকীয়ার ইঙ্গিত পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের ভাই শামীম বাদি হয়ে মামলা করেছেন। আমরা গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছি। খুনিকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের গুলশান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আরজিনাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথম দিকে সে অসংলগ্ন তথ্য দিলেও একপর্যায়ে সে হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। চার-পাঁচ মাস ধরে এক যুবকের সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেম চলছিল। প্রেমে বাধা দেওয়ার কারণে সেই প্রেমিকসহ দু’জনে জামিল শেখ ও নুসরাতকে হত্যা করেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আরজিনার সেই প্রেমিককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই পুরো ঘটনা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’
এদিকে নিহত জামিল শেখের ভাই দুলাল শেখ রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আরজিনা সব স্বীকার করেছে বলে পুলিশ তাকে জানিয়েছে। তার ভাইয়ের স্ত্রী আরজিনা এবং তার সেই প্রেমিকই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’