এমপি শওকতের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিলে স্থগিত

শওকত চৌধুরী৫০ দিনের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা জমা না দিলে  নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য শওকত চৌধুরীর জামিন বাতিল করার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে শওকত চৌধুরীকে এ বিষয়ে লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রবিবার (১২ নভেম্বর) দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। 

আদালতে সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘হাইকোর্টের রায়ের কপি আমরা হাতে না পাওয়ায় ওই রায়টি স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করি। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। এর ফলে হাইকোর্টের রায় তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত থাকছে।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দু'টি মামলার বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে গত ২২ অক্টোবর আদালত ৫০ দিনের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা না দিলে শওকত চৌধুরীর জামিন বাতিলের রায় দেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৬ সালের ৮ ও ১০ মে শওকত চৌধুরীসহ ব্যাংকটির ৯ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ব্যাংকটির ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বংশাল শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুল গনি, চাকরিচ্যুত অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার শিরিন নিজামী, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সফিকুল ইসলাম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পানু রঞ্জন দাস, সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইখতেখার হোসেন, সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার দেবাশীষ বাউল, সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার ও বর্তমানে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার আসজাদুর রহমান।

অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের বংশাল শাখা থেকে ২০১৬ সালের ৮ মে ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ৮১৫ এবং ১০ মে ৯৩ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ২১৩ টাকা ঋণ জালিয়াতি হয়। ২০১২ এর ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৩৭টি এলসি খুলে মেসার্স যমুনা এগ্রো কেমিক্যাল, মেসার্স এগ্রো কেমিক্যাল লিমিটেড ও উদয়ন এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজসে তিনি এ ঋণ জালিয়াতি করেন। পরে যা সুদে আসলে শত কোটি টাকার ওপরে চলে যায়।

এরপর ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে শওকত চৌধুরী হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। পরে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে  আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।

এদিকে এই মামলার অপর আসামিরা গত বছর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে। আবেদনে বলা হয়, প্রধান আসামি শওকত চৌধুরী জামিন পেয়েছেন। তাই তারাও জামিন পেতে পারেন। এরপর গত ২২ অক্টোবর জামিন বাতিলে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই রুলের ছূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আদালত সংসদ সদস্য মো. শওকত চৌধুরীকে আগামী ৫০ দিনের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে জমা না দিলে তার জামিন বাতিল করা হবে মর্মে রায় ঘোষণা করেন। 

পরবর্তিতে হাইকোর্টের ওই রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে না পাওয়ায় রায়টি স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত আজ মামলাটির রায় তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখেন।

আরও পড়ুন- ৫০ দিনে ২৫ কোটি টাকা জমা না দিলে এমপি শওকতের জামিন বাতিল