ধানমন্ডিতে ব্যবসায়ী অপহরণের অভিযোগ, ওসি বললেন ‘তিনি স্বেচ্ছায় গেছেন’

রাজধানীর ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে থেকে সিরাজুল হক মিন্টু (৪৮) নামে এক লন্ড্রি ব্যবসায়ীকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে তার শ্যালক নিয়াজ মোহাম্মদ। তবে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলছেন, ‘তিনি (অপহৃত ব্যক্তি ) স্বেচ্ছায় গেছেন। তার বিষয়ে খোঁজ চলছে।’

অপহরণরবিবার বিকাল ৩টার দিকে ধানমন্ডির ৯/এ ইবনে সিনার সামনে থেকে লন্ড্রি ব্যবসায়ী সিরাজুল হক মিন্টুকে পাজেরো জিপে তুলে নেওয়া হয়। এসময় তার সঙ্গে আজাদ নামে একজন বন্ধু ছিলেন। পুরো বিষয়টি তার সামনেই ঘটেছে। তার কাছ থেকে পরবর্তীতে নিয়াজ সবকিছু জানতে পেরেছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান।

নিয়াজ বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি, কিন্তু পাইনি। আজাদ নামে তার একজন বন্ধু চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন। রবিবার বিকালে তারা দু’জনে মিলে ইবনে সিনাতে আজাদের এক স্বজনকে দেখতে যান। রোগী দেখে বের হয়ে মতিঝিল যাওয়ার জন্য তারা একটি অটোরিকশা ভাড়া করতে চালকের সঙ্গে কথা বলছিল। এমন সময় এক লোক এসে তাকে একটু দূরে নিয়ে যায়। তখন তার নাম-ঠিকানা জানতে চায়। কথা বলে মিন্টু আবার অটোরিকশার কাছে চলে আসেন। এরপর ওই অপরিচিত লোকটি এসে জানায়, আমার বস আপনার সঙ্গে কথা বলবেন, সামনে চলুন। একটু দূরেই পাজেরো গাড়ির পাশে গিয়ে মিন্টু কথা বলেন। তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে পাজেরোটি জিগাতলার দিকে চলে যায়।’

এ ঘটনায় নিয়াজ মোহাম্মদ রবিবার রাতেই ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডি নম্বর-৮২১।

নিয়াজ বলেন, ‘জিডির পর পুলিশ ইবনে সিনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছে। সেখানেও দেখা গেছে মিন্টুকে এক লোক ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ কোনও কিছু জানাতে পারেনি।’

মিন্টু হাজারীবাগের ৬৮/১ এনায়েতগঞ্জ লেনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ওই এলাকাতেই তার লন্ড্রি। তার একমাত্র সন্তান রাইয়ান হক পৃথ্বি। সে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমবিএ করছেন। অপহৃত মিন্টুর স্ত্রী এ বছরের নভেম্বরে মারা যান।

নিয়াজ বলেন, ‘আমাদের কোনও শত্রু নেই। কি হয়েছে তাও বুঝতে পারছি না। আমরা অপেক্ষা করছি, কেউ ফোনে মুক্তিপণ চায় কিনা?’

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা অপহরণ না, ওই ব্যক্তি স্বেচ্ছায় গেছেন। প্রথমে সে দু’জন লোকের সঙ্গে কথা বলেছেন ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে। এর কিছুক্ষণ পর একটি মাইক্রোবাস আসে, সেটাতে তিনি উঠে তাদের সঙ্গে চলে যান। আমরা তার নম্বরটি এখন বন্ধ পাচ্ছি। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’

এর আগেও গত বছরের ২ এপ্রিল ধানমন্ডির ৮নং সড়কের ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে নিখোঁজ হন দৃক পিকচার লাইব্রেরির প্রশাসনিক ও হিসাব কর্মকর্তা ইরফানুল ইসলাম। এ ঘটনায় ওইদিনই দৃকের জেনারেল ম্যানেজার এসএম রেজাউর রহমান বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (জিডি)। পরে ওইদিন বিকালেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুঁড়ি এলাকা থেকে ইরফানুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় কলাবাগান থানায় নিহতের ভাই একটি মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। এখনও এ বিষয়ে কোনও কিনারা হয়নি।

অপরদিকে, গত বছরের ২৩ জুলাই ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. হাসান খালিদ ধানমন্ডির বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিনদিন পর ২৬ জুলাই বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাসান খালিদের নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ আদালতে আত্মহত্যা উল্লেখ করে রিপোর্ট করে।

এ নিয়ে নিহতদের পরিবারে ক্ষোভ রয়েছে। দু’টি নিখোঁজের ঘটনার সময়ই প্রকাশ্য দিন। ধানমণ্ডির মতো একটি ব্যস্ত এলাকা থেকে দু’জন মানুষ নিখোঁজ হয়ে লাশ হয়ে যাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক রয়েছে।