সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় দিয়ে রিকশায় শনিরআখড়া যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন শাহ আলম গাজী ও আকলিমা বেগম দম্পতি। এসময় আকলিমা বেগম ও তাদের সাত মাস বয়সী সন্তান আরাফাত রিকশা থেকে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশু আরাফাতের। মুহূর্তের মধ্যেই সন্তান হারানোর সেই দৃশ্যের কথা কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছেন না মা আকলিমা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে বিলাপ করছিলেন আকলিমা। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি কেন ঢাকায় আসলাম? ঢাকায় না আসলে আমার বাবার কিছু হতো না। আমি কিছুই বুঝলাম না।’
একই কথা বারবার আওড়াচ্ছিলেন আকলিমা। কিছুক্ষণ পর পর সংজ্ঞাও হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। তার বড় ছেলে আল-আমিনকে নিয়ে পাশেই বসেছিলেন আকলিমার বড় বোন। আকলিমার স্বামী শাহ আলম তখন সন্তান হারানোর শোকে নিশ্চল-নিশ্চুপ।
একটু থেমে শাহ আলম আবার বলেন, ‘রিকশা দয়াগঞ্জ ফুটওভার ব্রিজের কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছালে এক ছিনতাইকারী ব্যাগ ধরে টান দেয়। আমি এ পাশ থেকে কিছু খেয়াল করিনি। শুধু দেখলাম আকলিমা পড়ে গেল। ওর বুকেই তো ছিল ছোট ছেলে। এরপর শুধু একটা চিৎকারের শুনলাম, আর কোনও শব্দ হলো না। তাড়াতাড়ি রিকশা থেকে নেমেই ছেলেটাকে কোলে নিলাম। দেখি একদম নিস্তেজ। রিকশাওয়ালা একটা সিএনজি ঠিক করে দিলো, ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে এলাম। দেখে ডাক্তার বললো, আমার ছেলে আর বেঁচে নেই।’
শাহ আলম জানান, তার বড় ছেলে আল-আমিন অসুস্থ। মাস দেড়েক আগে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখিয়েছেন ছেলেকে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার আসতে বলেছিলেন ওই চিকিৎসক। সে কারণেই আবার ঢাকায় আসছিলেন তারা। তিনি আরও জানান, শনিরআখড়ায় তার স্ত্রী আকলিমার বড় বোন থাকেন পরিবারসহ। সেখানে থেকেই বড় ছেলের চিকিৎসা করানোর কথা ছিল।
আকলিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘আমার ব্যাগ নিতে চেয়েছিল ওরা, ব্যাগ তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবাকে তো আর বাঁচাতে পারলাম না। আমার বুকের ধনকে আমার কাছ থেকে ওরা কেড়ে নিলো।’
ঘটনার পর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত শিশুর বাবা নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। তবে এই মামলার কোনও আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে শিশুটির লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাটি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘটে। এর পরপরই আমরা ঘটনাস্থল ও ঢামেক হাসপাতালে যাই। সেখানে পরিবার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। জড়িতদের ধরতে আমরা এরই মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এলাকায় অভিযান শুরু করেছি।’