যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, ভুয়া পরিচয় দিয়ে অভ্যন্তরীণ এই ক্যাশ-ইনের বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তবে পুলিশের ধারণা, ব্যাংকের কারও সহযোগিতা ছাড়া এমন ক্যাশ-ইন বার্তা পাঠানো সম্ভব না।
জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংক এশিয়ার উত্তরা শাখার গ্রাহক ইয়াসিন শিকদারের (২৩) মোবাইলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছয় লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’ টাকা ক্যাশ-ইন হওয়ার এসএমএস আসে। ওইদিনই গ্রাহক চেক নিয়ে টাকা তুলতে যান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ সময় অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখতে পান, ঈশ্বরদী শাখা থেকে তার অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা হওয়ার একটি পোস্টিং দেওয়া হয়েছে কিন্তু অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা নেই। তখন ব্যাংক থেকে ইয়াসিন শিকদারকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। পরবর্তীতে ব্যাংকের উত্তরা শাখা থেকে ঈশ্বরদী শাখায় টাকা পোস্টিংয়ে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। জবাবে ঈশ্বরদী শাখার ম্যানেজার জানান, ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান পরিচয় দিয়ে ঢাকা থেকে একজন তাকে ফোন করে ব্যাংকের সার্ভারে সমস্যার কথা জানান। পরবর্তীতে সার্ভার ঠিক করে সেটা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা- তা পরীক্ষার জন্য ম্যানেজারকে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে লেনদেন করতে বলা হয়। পরে ম্যানেজার পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাংকের উত্তরা শাখার গ্রাহক ইয়াসিনের অ্যাকাউন্টে ছয় লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’ টাকা পোস্টিং দেন। সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের মোবাইলে ক্যাশ-ইন বার্তা চলে যায়। এদিকে ইয়াসিন টাকা দিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের তাগাদা দিতে শুরু করেন। ঈশ্বরদী শাখায় কথা বলার পর ব্যাংকটির উত্তরা শাখার কর্মকর্তারা গ্রাহককে জানিয়ে দেন তার অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা নেই। তখন ইয়াসিনের সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ব্যাংকের স্টাফরা ইয়াসিনকে মারধর করে ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় গত ৬ নভেম্বর উত্তরা (পূর্ব) থানায় ওই গ্রহকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার এ কে এম মহসীন উদ্দিন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ইয়াসিন শিকদার প্রতারণা করে টাকা তুলতে চেয়েছিলেন। টাকা না দেওয়ায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের তিনি হত্যার হুমকি দেন।
তবে ব্যাংক এশিয়ার নিজস্ব সার্ভারে কিভাবে একটি টেলিফোনের মাধ্যমে এভাবে লেনদেনের বার্তা গেল সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এ ঘটনার পর ঈশ্বরদী শাখার ম্যানেজার নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের আইটি বিভাগের প্রধানের পরিচয় দিয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা মামলা দায়ের করেছি। যিনি টাকা তুলতে এসেছিলেন তিনি ঘটনার একমাস আগে অ্যাকাউন্ট খোলেন। ঘটনার পর তার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি সহযোগিতা করেননি।’
গ্রাহকের ফোনে ভুয়া ক্যাশ-ইন বার্তা যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত এমনটা হয় না। তবে সম্প্রতি আরও দু’টি ব্যাংকে এরকম ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকে প্রতারক চক্রটি টাকা তুলে নিতে পেরেছিল। কিন্তু আমাদের এখান থেকে টাকা তুলতে পারেনি। এ ঘটনার পর আমরা পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনেছি। ফলে এখন এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই।’
এর সঙ্গে ব্যাংকের কেউ জড়িত কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি প্রাথমিক তদন্ত করছি। তথ্য উপাত্ত নিয়ে আরও তদন্ত হবে। তদন্ত শেষ হোক তখন জানা যাবে। তবে আমাদের ব্যাংকের কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মনে হয় না।’
জানা গেছে, ব্যাংক এশিয়ার এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে সিআইডির অরগানাইজ ক্রাইম বিভাগ। এ বিষয়ে সিআইডির মুখপাত্র ও অরগানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সিআইডি মামলাটি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, একটি প্রতারক চক্র এর সঙ্গে জড়িত। যার সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তাও জড়িত থাকতে পারেন। মূলত মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন বেশি।
যেভাবে ক্যাশ-ইন বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা করা হয়
জানা গেছে, প্রতারক চক্রটি কোনও মানিএক্সচেঞ্জ অফিসে গিয়ে ডলার কেনার কথা বলে। তবে আগেই সুবিধা মতো সেখানের কোনও ব্যাংক খুঁজে রাখে চক্রটি। এরপর মানিএক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে তারা জানায়, অনেক ডলার কেনা হবে, এতো টাকা ক্যাশ দেওয়া সম্ভব নয়। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হবে। তখন তারা ডলারের বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার জন্য মানিএক্সচেঞ্জের ব্যাংক হিসাব চায়। এরপর মানিএক্সচেঞ্জের ওই অ্যাকাউন্টে ক্যাশ-ইনের ম্যাসেজ পাঠায়। পরে মানিএক্সচেঞ্জকর্মী দ্রুত ব্যাংকে চলে যায়। ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার কর্মকর্তাও ক্যাশ-ইনের বার্তা পেয়ে মানিএক্সচেঞ্জকর্মীকে জানান, ক্যাশ পোস্টিং হচ্ছে, আপনি বসুন। ওদিকে মানিএক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও প্রতারক চক্রটি ব্যাংককর্মীকে ফোন দিয়ে টাকা জমা হয়েছে কিনা- জানতে চায়। তখন ব্যাংককর্মী জানান, টাকা পোস্টিং হচ্ছে। তার কথা শুনে মানিএক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ প্রতারক চক্রকে ডলার দিয়ে দেয়। পরে চক্রটি ডলার নিয়ে পালিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর মানিএক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেলে জানতে পারে টাকা পোস্টিং হয়নি।
আরও পড়ুন:
১০ মাসে গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে ৬ গুণের বেশি