প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিকটিম পরিবারগুলোর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ব্যাপক অভিযোগ থাকার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ার’ হিসেবে প্রকাশ করেছে এবং দায়মুক্তি ভোগ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ কথা বললেও স্থানীয়দের মতে তারা এমন কোনও ঘটনার কথা জানতে পারেননি। জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘনের নিকৃষ্টতম উদাহরণ হচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২৭৭ এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদের অনুচ্ছেদ ৬৭৮ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে নিহত ১৫৪ জনের মধ্যে ১৩৯ জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। অধিকার এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদের মধ্যে পুলিশের হাতে ১০৪ জন, র্যাবের হাতে ৩২ জন, ডিবি পুলিশের হাতে ২ জন এবং সেনাবাহিনীর হাতে ১ জন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের ১২ জন নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন। এদের মধ্যে পুলিশের হাতে ৯ জন, র্যাবের হাতে ১ জন, বিজিবির হাতে ১ জন এবং সেনাবাহিনীর হাতে ১ জন নিহত হয়েছেন। এসময়ের মধ্যে পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন একজন ও পুলিশের পিটুনিতে ২ জন মারা গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ১৫৪ জনের মধ্যে ২ জন বিএনপি নেতা, ১ জন শিবিরকর্মী, ১ জন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১ জন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য, ১ জন নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির (মৃণাল বাহিনী) সদস্য, ১ জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, ২ জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) সদস্য, ১ জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল জনযুদ্ধ) সদস্য, ১ জন সর্বহারা পার্টির সদস্য, ৫ জন জেএমবির সদস্য, ১ জন হরকাতুল জিহাদ-আল-ইসলামীর সদস্য, ১ জন গরু ব্যবসায়ী, ১ জন গ্রামবাসী, ২ জন ব্যবসায়ী, ১ জন কাঠমিস্ত্রী, ১ জন কৃষক, ১ জন ড্রাইভার, ১ জন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী, ২ জন বিভিন্ন মামলার আসামি, ১ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ১১৯ জন কথিত অপরাধী এবং ৭ জনের পরিচয় জানা যায়নি।
বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৬ জনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে এবং ৪৫ জনকে গুম করার পর পরবর্তীতে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং ১৬ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বাকি ১৬ জনের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা
অধিকার এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১ জন সাংবাদিক নিহত, ২৪ জন সাংবাদিক আহত, ৯ জন লাঞ্ছিত, ১১ জন হুমকির সম্মুখীন এবং ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।