মারমা দুই বোনের ছবি ফেসবুকে, তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবে মানবাধিকার কমিশন

nhrcমারমা দুই বোনের ছবি রাঙামাটির এসপির ফেসবুকে দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিশনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, রাঙামাটিতে যৌন নির্যাতনের শিকার মারমা সম্প্রদায়ের দুই বোনের পিতা উচ্চ আদালতে তাদেরকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করলে উচ্চ আদালত তাদেরকে পিতার জিম্মায় হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশ দেন।
গণমধ্যমে জানা যায়, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে হাসপাতাল থেকে তাদের পিতা নিজের জিম্মায় নিতে গেলে তারা ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় হাসপাতাল থেকে যেতে রাজি হননি। চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশিষ রায়ের স্ত্রী ইয়েন ইয়েনের উপস্থিতিতে পিতা-মাতার সঙ্গে মেয়েদের এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তীতে সিভিল সার্জন মেয়েদেরকে তাদের পিতার কাছে হস্তান্তর করেন। তারপর থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না মর্মে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়।’
‘যেহেতু স্পর্শকাতর ঘটনাটি শুরু থেকেই কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে এবং আমলে নিয়েছে তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের জন্য রবিবার দুপুর ১২ টায় কমিশন কার্যালয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য মো. নজরুল ইসলাম, নুরুন নাহার ওসমানী, বাঞ্ছিতা চাকমা, এনামুল হক চৌধুরী এবং কমিশনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে, ‘ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনাপূর্বক আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন, কমিশনের সদস্য এবং রাঙামাটি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বাঞ্ছিতা চাকমা। প্রতিনিধিদলের অন্য দুজন সদস্য হলেন কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শরীফ উদ্দীন এবং উপ-পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. গাজী সালাউদ্দিন। উক্ত প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পাঠানো হবে।’
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির পুলিশ সুপার (এসপি) নিজ ফেসবুকে যৌন নির্যাতনের শিকার দুই বোনের ছবি, নাম, পরিচয়, পিতা-মাতার নাম প্রকাশ করেছেন মর্মে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তৈরি এবং জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি মারমা সম্প্রদায়ের দুই বোন যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমলে নিয়ে ২৫ জানুয়ারি রাঙামাটির জেলা প্রশাসককে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-পূর্বক ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। এছাড়াও, কমিশনের পক্ষ থেকে সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা রাঙামাটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই বোনের সঙ্গে সাক্ষাৎপূর্বক আলোচনা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মারমা মেয়েদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে কমিশন আইন অনুযায়ী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’