আপন জুয়েলার্সের সব শোরুমই খোলা, জব্দ স্বর্ণের জন্য আইনি লড়াই চলছে

 

আপন জুয়েলার্সের শোরুমআপন জুয়েলার্সের রাজধানীর সব শোরুমই এখন খোলা। আগের মতোই ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে আপন জুয়েলার্স। এর আগে স্বর্ণ বিক্রির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারার অভিযোগে গত ১৩ ও ১৪ মে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ৫টি শোরুমে অভিযান চালানোর পর সাড়ে ১৩ মন স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম হীরা জব্দ করার পর তাদের সব শোরুমে সিল মেরে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। প্রায় তিন সপ্তাহ পর শো রুমগুলো খুলে দেওয়া হলেও জব্দ স্বর্ণ আর ফেরত দেওয়া হয়নি। জব্দ স্বর্ণ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রয়েছে। সেই স্বর্ণ ফেরত পেতে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আপন জুয়েলার্স।

গত বছরের ৫ জুন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের পক্ষ থেকে শোরুমগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপরও জব্দ স্বর্ণ ফেরতের দাবি জানিয়ে কিছুদিন শোরুমগুলো বন্ধ রেখেছিলেন তারা। পরে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো গুছিয়ে তারা আবার ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করলেও জব্দ স্বর্ণগুলো এখনও ফেরত পাননি। রাজধানীর কয়েকটি শোরুম ঘুরে দেখা গেছে এখন পুরোদমেই তারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শোরুমগুলোর কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, মৌচাক, ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ার ও বায়তুল মোকাররমে আপন জুয়েলার্সের শোরুম রয়েছে।  

আপনা জুয়েলার্সে শোরুম

এদিকে জব্দ স্বর্ণ ফেরত পেতে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আপন জুয়েলার্স। ঘটনার কয়েকদিন পরই জব্দ স্বর্ণ ফেরত পেতে তারা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আপন জুয়েলার্সের আইনজীবী আখতার ফরহাদ জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জব্দ স্বর্ণ ফেরত পেতে তারা উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের রিট আবেদনগুলো শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।’ আইনি লড়াইয়ে জিতবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপন জুয়েলার্স নিয়মানুযায়ী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই না কারও স্বর্ণ আটক রাখা হোক। বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্তই এখন চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।’

আপন জুয়েলার্সের জব্দ স্বর্ণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের কমিশনার ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই আপন জুয়েলার্সে অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, মানিলন্ডারিং, আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের সিডিউলভুক্ত অপরাধ করেছে। সেখানেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। তারাও তাদের আইনে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।’  তিনি বলেন, ‘আপন জুয়েলার্স স্বর্ণ ফেরত পেতে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালাচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে আদালতে। এ আইনি লড়াইয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরই জিতবে বলে আমি মনে করি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মাসুম পাটোয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপন জুয়েলার্সের জব্দ করা স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে (অস্থায়ী) রাখার যে সিদ্ধান্ত ছিল, তা এখনও বহাল রয়েছে। যেহেতু ওই স্বর্ণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জমা রেখেছে সেহেতু তাদের চাহিদা অথবা আদালতের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টেই থাকবে।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম