সড়কে নারীদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি উত্তরা ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ-জাহারা। তার হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘মেয়েদের নিরাপত্তা চাই’।
ফাতেমা তুজ-জাহারা বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নিরাপদে চলাচল করতে চাই। আর যারা যৌন হয়রানির মতো ন্যক্কারজনক কাজ করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। গতকাল (শনিবার) আমাদের বোনকে হেনস্তা করা হয়েছে, আমরা দোষীদের বিচার চাই। এটাই আমাদের দাবি।’
শনিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে তুরাগ বাসে হেলপার ও কন্ডাক্টরের হাতে উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন। এর প্রতিবাদে রবিবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনের সড়কে তুরাগ পরিবহনের ১২ থেকে ১৫টি বাস আটকে দেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ না করে শুধু অভিযুক্ত তুরাগ পরিবহনের বাসগুলো আটকে দেন তারা। এই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তুরাগ পরিবহন মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মো. রাফিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল শনাক্ত করেছি। এ ঘটনায় এই থানায় দুইজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাড্ডা থেকে উত্তরা যাওয়ার পথে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে এই ঘটনা ঘটে। সেখানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বাস ও আসামিদের শনাক্তের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তুরাগ বাসের মলিকদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে।
প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা জানান, বাসে যৌন হয়রানির এমন ঘটনা নতুন নয়। কেবল বাসেই নয়, রাস্তাঘাট ও শপিংমলেও নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করলেও সামাজিক হয়রানি এড়ানোর জন্য অনেকে ঘটনাগুলো নিজের মধ্যে চেপে রাখে।
তিনি জানান, এই ঘটনায় উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তুরাগ পরিবহনের মালিকপক্ষ আলোচনা করেছে। তারা আসামিদের শনাক্ত করার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আসামি গ্রেফতার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আটকে রাখা কোনও বাসই আমরা ছাড়বো না।’
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী ক্লাসে আসার জন্য বাড্ডা লিংক রোড থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। ওই বাসে কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। তবে আর কোনও যাত্রী তারা তুলছিল না। বাসে থাকা অন্য যাত্রীরা নতুনবাজারসহ পরের স্টপেজে নেমে যেতে থাকেন। এতে ওই নারী শিক্ষার্থী কিছুটা ভয় পেয়ে বাকি যাত্রীদের সঙ্গে বসুন্ধরা স্টপেজে নেমে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে বাসের কন্ডাক্টর ও হেলপার তার হাত ধরে ফেলে এবং বাসে থাকা আরও দুইজন মেয়েটিকে আটকাতে বলে। এতে মেয়েটি চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নেমে যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে ঘটনাটি সহপাঠীদের জানান ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। এরপর বিষয়টি মৌখিকভাবে বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে এবং লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে জানানো হয়।
আরও পড়ুন-
যৌন হয়রানির প্রতিবাদে উত্তরায় বাস আটকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ