ঘড়ির আড়ালে কী আমদানি করেছে মেসার্স এএসএফ?

চীন থেকে একহাজার পিস ঘড়ি আমদানি করেছে উত্তরা আশকোনার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স এএসএফ সিন্ডিকেট’। বিল অব এন্ট্রিতে তাদের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি ঘড়ির ওজন বলা হচ্ছে ৩ কেজি! যা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে করছেন এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার অডিট সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা, ঘড়ির আড়ালে মূল্যবান পণ্য চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। মিথ্যে এই ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি এবং মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঘড়ি আমদানিঘড়ির আড়ালে কী আমদানি করা হয়েছে তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে শুল্ক মূল্যায়ন ও অডিটের (সিভিএ) একটি দল। পাশাপাশি এই চালান খালাসে আরও কারা জড়িত রয়েছে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। এই দলের অডিটেই আমদানি চালানে শুল্ক জালিয়াতিসহ অন্যান্য অপরাধগুলো ধরা পড়ে।

জানা গেছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স এএসএফ সিন্ডিকেট’ গত বছরের ৩১ মে ঢাকা কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি সি ৪৮৯৪৯৭ মাধ্যমে একটি চালান খালাস করে। যাতে বিল অব এন্ট্রিতে ৪৪টি আইটেমের ওজন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৮৬৯ কেজি। যার মধ্যে ঘড়ির ওজন দেখানো হয় ৩ হাজার ৩১৫ কেজি। সে হিসেবে প্রতিটি ঘড়ির ওজন হয় ৩ কেজি!

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনার ড. মঈনুল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই চালানটিতে আমরা বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তার মধ্যে বিল অব এন্ট্রিতে মিথ্যে ঘোষণা, রাজস্ব ফাঁকি, মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ করেছে। সবগুলো বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’

কাস্টম হাউসের অনলাইন সিস্টেমে একহাজার পিস ঘড়ি খালাসের শুল্কায়ন হলেও ব্যাংকের মূল দলিলে ঘড়ির বর্ণনা নেই। ফলে কী পণ্য খালাস করা হয়েছে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। আমদানি করা ৪৪টি আইটেমের মধ্যে টেলিভিশনের ‘লোডেড পিসিবি’র মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি পিস ২.৯৮ মার্কিন ডলার। কিন্তু কাস্টম ডাটাবেসে এই পণ্যের প্রকৃত মূল্য আছে ১১.২৫ মার্কিন ডলার। শুল্কায়ন আইটেম নং ১৯ এ ‘টেবিল’ হিসেবে মোট ৫০০ কেজির মধ্যে প্রতি কেজির মূল্য ধরা হয়েছে .৩২ মার্কিন ডলার। এসআরও অনুসারে এই পণ্যের নির্ধারিত মূল্য ২.৫০ ডলার। একইভাবে আইটেম নং ২৫ এ ১০৭ কেজি ইমিটেশন জুয়েলারির ৫.৭৫ ডলার প্রতি কেজি মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এসআরও অনুযায়ী এর নির্ধারিত মূল্য ৮ ডলার প্রতি কেজি। ঘোষণা অনুযায়ী পণ্যের মূল্য ও এসআরও প্রকৃত মূল্যের সঙ্গে পার্থক্য করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন অডিট কর্মকর্তারা।

চালানটি সিএন্ডএফ এজেন্ট হিসেবে খালাস করে ‘সিনথিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা হয় উত্তরা ব্যাংকের ইংলিশ রোড শাখার ‘এসোর্টেড গুডস’ এলসির মাধ্যমে। এই এলসিতে পণ্যের মূল্য বাবদ ২৪ হাজার মার্কিন ডলার বিদেশে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু কাস্টম হাউসের সিস্টেমে পণ্যের মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ২৪ মার্কিন ডলার। এতে করে অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনার ড. মঈনুল খান।

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকের পাঠানো টাকা ও কাস্টম হাউসের সিস্টেমে দেখানো টাকার মিল নেই। প্রায় ২০ হাজার মার্কিন ডলারে গরমিল রয়েছে। মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে কী পণ্য আমদানি করা হয়েছে এবং আর কী পরিমাণ টাকা তারা পাচার করছে সে বিষয়গুলো সামনে রেখে আমাদের অনুসন্ধান চলছে।’