যেভাবে জামিন জালিয়াতি করে ধরা পড়লো শিশুধর্ষণ মামলার আসামি

সুপ্রিম কোর্ট

 জামিনের আবেদনে জালিয়াতি করার মাধ্যমে হাইকোর্ট থেকে জামিন পায় গাজীপুরের শিশুধর্ষণ মামলার আসামি বিল্লাল ভূঁইয়া। তবে হাইকোর্টের আদেশ সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে পৌঁছানোর পর আসামির জামিন জালিয়াতির বিষয়টি বিচারকের নজরে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মামলার তদবিরকারককে তলব করেছেন আদালত। বুধবার বিচারপতি মো. শওকত হোসেন ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।

আসামি বিল্লাল ভূঁইয়ার জামিন জালিয়াতির বিষয়ে জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ‘গাজীপুরের শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামে ওই শিশুকে ঘরঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে বিদেশফেরত প্রতিবেশী বিল্লাল ভূঁইয়া (৪৫) ধর্ষণ করে। ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষক বিল্লাল ভূঁইয়া একই গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী ও ছেলে বিদেশে থাকে। পরে বিষয়টি প্রকাশ না করতে হুমকি দিয়ে শিশুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করলে শিশুটি ধর্ষণের কথা তার মা’কে জানায়। পরে শিশুটির মা বিল্লাল ভূঁইয়া (৪৫), তার ভাই দুলাল ভূঁইয়ার ছেলে রুবেল ভূঁইয়া (২২) ও মৃত তাজউদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়াকে (৪৫) আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এরপর শিশুটির মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই আসামি বিল্লাল ভূঁইয়া পলাতক ছিল। তবে এ অবস্থাতেই গত বছরের ১৭ নভেম্বর এই মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘মামলাটি চলমান অবস্থায় গত ১৪ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করে বিল্লাল। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে গত ২৪ এপ্রিল গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে জামিন আবেদন করে বিল্লাল। কিন্তু ওই আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। এরপর সেই আদেশের বিপরীতে গত ৯ মে মামলার নথি জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয় আসামি বিল্লাল ভূঁইয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের দাখিল করা ওই জালিয়াতের জামিন আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেয়েটির বয়স ২১ (প্রকৃত পক্ষে ১০ বছর)। দুজন একে অন্যকে ভালোবাসে। মেয়ের মা সেটি পছন্দ করেন না। ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেনি। কোনও প্রমাণ নেই মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে।’

জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ওই জামিনের আদেশ নিম্ন আদালতে যাওয়ার পর জালিয়াতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আসে। পরে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। আসামি শিশুটির মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ও হাইকোর্টের আইনজীবীর নাম জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। কিন্তু আসামি এখনও বের হতে পারেনি। সে জেলেই আছে। এ অবস্থায় সবকিছু আদালতকে জানানো হলে হাইকোর্ট মামলার তদবিরকারককে আগামী রবিবার (২৭ মে) তলব করেছেন । একইসঙ্গে আগের আদেশ (জামিন) প্রত্যাহার করে আসামির জামিন বাতিল করেছেন।’

উল্লেখ্য, গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার নয়নপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. রবিউল ইসলামকে ওই জালিয়াতিকৃত জামিন আবেদনে তদবিরকারক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবেদনকারীর আইনজীবী হিসেবে দেখানো হয়েছে মো. জামাল উদ্দিনকে। কিন্তু জামালের যে আইডি দেখানো হয়েছে, সেই আইডিতে আসল আইনজীবী হচ্ছেন মো. হারুন অর রশীদ।