রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন ১২/এ বাসার ১১ তলা ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী শাওনকে কারণে-অকারণে মারধরে করেছেন গৃহকর্তা ও বাসার লোকজন। তার বিরুদ্ধে টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল। টাকাগুলো ফিরিয়ে দিতে ২০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয় তাকে। নিজের ওপর নির্যাতনের হুমকি তো ছিলই, তার বাবাকে ধরে এনে পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল বাসার লোকজন। তাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ২০ জুন পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এই কিশোর।
শাওনকে পাইপ বেয়ে ওপর থেকে নামতে দেখে চিৎকার করে লোকজন। এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। তাকে ধরে বাসার গার্ড রুমে রাখা হয়। এরপর নিচে নেমে শাওনের ওপর নির্যাতন করতে থাকে গৃহকর্তার পরিবারের লোকজন। এই কিশোরের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন স্থানীয়রা। পুলিশ এসে উদ্ধার করে শাওনকে। আটক করা হয় গৃহকর্তার শ্যালক ইকবার, তার স্ত্রী তামান্না ও গৃহকর্তার ছেলে তানজিলুর রহমান। পলাতক রয়েছে গৃহকর্তা মোজাফফর হোসেন ও তার স্ত্রী তাহমিনা খানম লিলি।
গত ২০ জুন ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রমনা থানার এসআই মোশাররফ হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে টিমসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করি। তখন সে গার্ডরুমে আটক ছিল। তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পর দেখি সারা শরীরে নির্যাতনে চিহ্ন। হাত, পিঠ, পা ও পায়ের তালু সব জায়গায় নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। কিছু চিহ্ন পুরনো। আবার কিছু নতুন।’
পুলিশের এই কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ইস্কাটন গার্ডেনে মোজাফফর হোসেনের বাসায় কাজ করছিল শাওন। ছোটখাটো বিভিন্ন অজুহাতে তার ওপর নির্যাতন চালাত ওই বাসার লোকজন। শুনেছি, এর আগে বৈদ্যুতিক শকও দিয়েছিল তাকে। সবশেষ রোজার ঈদের আগে টাকা চুরির অভিযোগ তোলা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে শাওন বলছে, সে চুরি করেনি। এ কারণে তাকে মারধর করা ও ২০ জুনের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এমনকি বাড়ি থেকে তার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেনকেও ধরে এনে থানায় দেওয়ার হুমকি দেয় তাকে।’
এ ঘটনা ও মামলা প্রসঙ্গে ডিএমপি রমনা জোনের এডিসি আজিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘৯৯৯ নম্বরের সহায়তায় শাওনকে উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ধরা পড়েছে অভিযুক্ত তিনজন। আটক ব্যক্তিরা নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। পলাতকদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’