দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি রবিবার



৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর আদালতে খালেদা জিয়াকুমিল্লার নাশকতার দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) আগামীকাল রবিবার (২৪ জুন) শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। শনিবার খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এহসানুর রহমান বলেন, ‘নাশকতার অভিযোগে কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে লিভ টু আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৯ ও ১০ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে। রবিবার (২৪ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটির ওপর শুনানি হবে।’
এর আগে গত ২৮ মে কুমিল্লার নাশকতার দুই মামলায় ৬ মাসের জামিন পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিন আদেশ দেন।
পরে হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর গত ২৯ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত করেন এবং ৩১ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির আদেশ দেন। সে অনুসারে ৩১ মে শুনানির পর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রাখেন এবং রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে আদেশ দেন। এছাড়া ২৪ জুন এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিনও ধার্য করেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে তা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।
আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় আইকন পরিবহনের একটি বাসের কয়েকজন যাত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২০ জন। সেসব ঘটনায় দু’টি মামলা করা হয়। একটি হত্যার অভিযোগে, অন্যটি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা হয়।

হত্যার অভিযোগে মামলা
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় ৭ জন যাত্রি মারা যায় এবং আরও ২৫/২৬ জন গুরুতর অসুস্থ হয়। এ ঘটনায় পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩ টায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান ৫৬ জনের বিরুদ্ধে বাদ হয়ে মামলা করেন। পরে এ মামলায় আদালতে অভিযোগ পত্র দেওিয়া হয়। বিচারকালে দায়রা আদালতে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হয়। সেই জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ জুন দিন ধার্য্য রাখা হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।

অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দার পুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়া সহ ৩২জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চলমান। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন আদালত। পরে গত ২৩ এপ্রিল এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত আবেদনটির পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ জুন দিন ধার্য রাখেন। কিন্তু এ অবস্থায় শুনানি না করে এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়া।