সন্ত্রাসী রমজানের নির্দেশেই বাড্ডায় আ. লীগ নেতা ফরহাদ হত্যা



বাড্ডা আ.লীগ নেতা ফরহাদ হত্যা মামলার ৫ আসামিকে গ্রেফতারের পর ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনবিদেশে পলাতক রমজান বাড্ডা আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ আলীকে হত্যার নির্দেশ দেয় বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা ও অপরাধ-তথ্য বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন। তিনি জানান, ‘এলাকায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ফরহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে রমজান। এরপর রমজান তার ছোট ভাই সুজন ও সহযোগী জাকির ও আরিফকে এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব দিয়ে ঘটনার কয়েকদিন আগেই ভারতে চলে যায়।’ শনিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ও মিরপুরের শাহআলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফরহাদ হত্যা মামলার ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-উত্তর)। তারা হলো মো. জাকির হোসেন, মো. আরিফ মিয়া, মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, মো. বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনিকে। এরমধ্যে মো. জাকির হোসেন, মো. আরিফ মিয়াকে গুলশান এলাকা থেকে, মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, মো. বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনিকে মিরপুরের শাহআলী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি পিস্তল, ৪টি ম্যাগজিন ও ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গত ১০ জুলাই এই হত্যা মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে সুজনকে গ্রেফতার করার পর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি'র যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘ফরহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে রমজান। সে বিষয়টি আশিক ও মেহেদীকে জানায়। পরে তারা ফরহাদকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর রমজান তার ছোট ভাই সুজন এবং দুই সহযোগী জাকির ও আরিফকে এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব দিয়ে ঘটনার কয়েকদিন আগেই ভারত চলে যায়। রমজান এখনও ভারতে পলাতক রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী ওরফে কলিন্স এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব দেয় তাদের বেতনভুক্ত শ্যুটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদকে।’ তিনি আরও জানান, ‘ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জুন সকালে কিলাররা উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারে শীর্ষসন্ত্রাসী মেহেদীর ‘বাংলাদেশে সামরিক কমান্ডার’ অমিতের সঙ্গে খুনের বিষয়ে আলোচনা করে। সেখান থেকে সুজনের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের আরেক সহযোগী অমিত ছাড়া সবাই মিলে একটি রিকশার গ্যারেজ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। এই অস্ত্র তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয় মেহেদীর সহযোগী পুলক ওরফে পলক। পরে অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেয়। আর তাদের ব্যাকআপ হিসেবে ঘটনাস্থলের কিছু দূরে থাকে সাদ ওরফে সাদমান। পরে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় তাদের সহযোগী আরিফ ফরহাদকে চিনিয়ে দেয়। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে ফরহাদ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্যুটাররা গুলি চালায়। এরপর মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পালানোর জন্য বাড্ডা লিংক রোডের পুলিশের চেকপোস্টে গুলি চালায় নুর ইসলাম ও অনির।’
আব্দুল বাতেন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর সবাই অস্ত্র জমা দিতে পল্লবীতে অমিতের কাছে যায়। ওই সময় হত্যাকাণ্ডের জন্য অমিত ১ লাখ টাকা তাদের সবাইকে ভাগ করে দেয়। এরপর পালিয়ে থাকতে শ্যুটাররা বরিশাল চলে যায়। সেখানে বেশ কিছুদিন থেকে তারা আলাদা হয়ে ঢাকায় ফিরে আসে।’

উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর রমজানের ছোট ভাই সুজন দেশ ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যায়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ফিরে আসে।’
গত ৪ জুলাই দিনগত মধ্য রাতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের দুই শ্যুটার নুর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত নিহত হয় বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘বাড্ডা-গুলশান এলাকায় এই কিলারদের নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষসন্ত্রাসী আশিক ও মেহেদী। তার মধ্যে মেহেদী আমেরিকায় ও আশিক ভারতে থাকে। তাদের গ্রুপের আরও কয়েকজন রয়েছে সুইডেন, ফ্রান্স ও মালয়েশিয়ায়। তবে আশিক বিএনপির সময়ে বিশাল একটি ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করতো। বিদেশে বসে তারা রাজধানীর বিভিন্ন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করছে। তারা শিগগিরই দেশে আসছে বলেও হুমকি দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এই গ্যাংটি চেষ্টা করছে, পুনরায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে ও আধিপত্যকে বিস্তার করতে। সে জন্য এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।’
আসামিদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া গেছে কিনা, জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের অনেকেরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় আছে। তবে আমরা ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজ বেশি ফোকাস করি। রাজনৈতিক পরিচয় এখানে ফোকাস করা মেন্ডেটরি নয়।’