ভিকারুননিসার প্রিন্সিপালের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিক্ষোভ

 

 

 



ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপালের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ দাবিতে মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির ১ নম্বর গেটের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।

তাদের দাবি, ‘আজকের মধ্যেই প্রিন্সিপালকে অপসারণ করতে হবে।’

বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এতে লিখা ছিল, ‘এ কেমন শিক্ষক, যার জন্য শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়?’ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান।

অভিভাবকদের একজন বলেন, ‘আমরা এ ধরনের মৃত্যু দেখতে চাই না। আমাদের এক দফা এক দাবি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই প্রিন্সিপালকে অপসারণ করতে হবে।’

অভিভাবক আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এখানে পড়ে। একজন কলেজে আরেকজন স্কুলে। এখানকার সব শিক্ষক খারাপ না। কিছু শিক্ষক খারাপ। তাদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। তারা তুচ্ছ ঘটনায় অভিভাবকদের ডেকে আনেন।’

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এত বড় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অথচ এখানে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নাই।’

অভিভাবক দিলরুবা জাহান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল পাওয়া গেলে, তার সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হবে, তা শিক্ষকেরা জানেন না। তাদের আরও প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার।’

ভিকারুননিসা শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় অভিভাবকদের বিক্ষোভপ্রতিষ্ঠানটির অপর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এক মেয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে পড়ছে। এই স্কুলটিতে দুর্নীতিতে ভরা। রয়েছে নানা অনিয়ম। এসব দূর হওয়া দরকার।’

তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষার খাতাও নিপরীক্ষা করে না।

অভিভাবক সুদিপ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে কোটি কোটি টাকার ভর্তি বাণিজ্য হয়। মৃত এই অরিত্রির সিটটিও লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করা হবে।’

তিনি মানবিক শিক্ষার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভুল করবে। তবে তাদের সঙ্গে কেমন আচারণ হবে, তা শিক্ষকদের জানা উচিত।’

এদিকে অরিত্রির সহপাঠীরা বলেন, আমরা মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলাম। কারণ, আমারা সবাই শোকাহত ছিলাম। কিন্তু তারপরও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আজ অনেকেই পরীক্ষা দিতে পারেনি।

তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যারা পরীক্ষা দিতে পারেনি, পরে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রিন্সিপাল (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদাউস বলেন, ‘ভিকারুননিসা স্কুলের অনেক শাখা, পরীক্ষা স্থগিত করলে, তার শিডিউল মেলানো কঠিন হয়ে যায়। তাই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়নি। তবে যারা পরীক্ষা দেয়নি, তারা পরবর্তীতে দিতে পারবে।’

শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ভিকারুননিসা ক্যাম্পাসে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী এমনি এমনি মারা যায়নি। আমরা কমিটির রিপোর্ট পেয়ে ব্যবস্থা নেবো। আমরা এর আগেও ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এ সময় স্কুলের প্রিন্সিপাল ও অভিভাবকদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সচিব, সহকারী সচিব, মাউশির মহাপরিচালক কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে শান্তিনগরের নিজ বাসা থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি, অরিত্রির বিরুদ্ধে ফাইনাল পরীক্ষায় নকলের অভিযোগ তুলে তার বাবাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে অরিত্রির বাবাকে জানানো হয় তার মেয়েকে টিসি দেওয়া হবে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল অরিত্রির সামনে তার বাবাকে অপমান করেন। এ ঘটনায় সে আত্মহত্যা করেছে। পরে সোমবার সন্ধ্যায় প্রিন্সিপাল (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদাউস ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে অরিত্রির পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে যান। এ সময় অরিত্রির উত্তেজিত স্বজনরা তার ওপর চড়াও হন। এ সময় তিনি টিসি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।