২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাজধানীর কদমতলীতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাসেলের বাড়ি খুলনার রূপসা থানায়। এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাদের বের করতে থানা পুলিশ ব্যর্থ হলে ২০১৭ সালের শেষ দিকে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো। ঘটনার তিন বছর পর হত্যাকারীদের শনাক্ত করে দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও একই দিন সন্ধ্যায় শ্যামপুরের হাজীগেট ব্যাংক কলোনি থেকে হোসেন বাবু ওরফে হোন্ডা বাবুকে (২৫) গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো। তারা দুজনই রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পিবিআইয়ের অনুসন্ধান ও আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, আসামি সজল বিয়ে করে রাসেলের গ্রামের বাড়িতে। সেই সূত্রে তাদের পরিচয় ও সুসম্পর্ক হয়। সজল থাকতো কদমতলীতে। সখ্যতার একপর্যায়ে ঢাকায় টায়ার কারখানায় চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে রাসেলকে ঢাকায় নিয়ে আসে সজল। আশ্বাস দিলেও চাকরি দিতে না পারায় দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
এদিকে সজলের পরিচিত পিংকি ও পারভেজ কদমতলী এবং শ্যামপুর থানা এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত পিংকি তার প্রতিপক্ষ পারভেজকে হত্যা করার জন্য সজল ও বাবুকে ভাড়া করে।
এরই মধ্যে ভিন্ন পরিকল্পনা করে সজল। পারভেজকে হত্যার পাশাপাশি একই স্থানে রাসেলকেও হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে কদমতলীর বড়ইতলা মোড়ে পারভেজ, সজল, হোসেন বাবু ও তাদের সঙ্গী ইয়াবা সেবনকারী আল-আমিন মিলিত হয়। কৌশলে সেখানে নিয়ে আসা হয় রাসেলকে। সবাই মিলে ইয়াবা সেবন করে সেখানে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পারভেজকে ছুরিঘাত করে সজল ও বাবু। একই সঙ্গে রাসেলের পিঠেও ছুরিকাঘাত করা হয়।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, পারভেজকে হত্যার চুক্তি করেছিল পিংকি। পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে সজল ও বাবুকে ভাড়া করে সে। এরমধ্যে একই সময়ে রাসেলকেও হত্যার পরিকল্পনা করে সজল। কারণ তার সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা ছিল। পরিকল্পনা মতো, কোমরে থাকা ছুরি দিয়ে পারভেজ ও রাসেলকে আঘাত করে সজল এবং বাবু। সৌভাগ্যক্রমে পারভেজ বেঁচে গেলেও ডান পাঁজরে ছুরিকাঘাতে মারা যায় রাসেল।
এ ঘটনায় নিহত রাসেলের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। স্থানীয়দের ধারণা, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয় রাসেলের। থানা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলেও কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা উদঘাটিত হয়নি। ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় কদমতলী থানা পুলিশ। খুনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদী না-রাজির আবেদন করেন। এই আবেদন আদালত গ্রহণ করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আল-আমিন শেখ। তিনি জানান, ‘আমি ঘটনা সম্পর্কে জানতে ভিকটিমের গ্রামের বাড়ি ও ঘটনাস্থল কদমতলী এলাকায় অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করি। নিজস্ব সোর্স ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করি। পরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সূত্রবিহীন এ মামলার রহস্য বেরিয়ে আসে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন সন্ধ্যায় শ্যামপুরের হাজীগেট ব্যাংক কলোনি থেকে হোসেন বাবু ওরফে হোন্ডা বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসে।’
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরও যাদের নাম এসেছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘টার্গেটে থাকা পারভেজ বেঁচে গেলেও বর্তমানে অন্য একটি মামলায় কারাগারে রয়েছে। পিংকি ও আল-আমিন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’