ভুয়া জন্মসনদ নিয়ে ছদ্মনামে ঘুরছে সিরিজ বোমা হামলার সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিরা

জেএমবি সদস্য বেলাল

২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্যরা ছদ্মনামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক রয়েছে। জঙ্গিরা ভুয়া জন্মসনদ নিয়ে নিজেদের আসল পরিচয় লুকিয়ে ফেলছে। এর মধ্যে এমনই এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।

পুলিশের  অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিরিজ বোমা হামলার সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামি পলাতক ছিল। এর মধ্যে বেলাল মিয়া ওরফে বেল্লাল ওরফে রুবেল (৩৬) নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজার পরোয়ানা ছিল। বেল্লাল ছাড়াও আরও দুজন সাজাপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্য এখনও পলাতক। তারা দেশেই আছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছদ্মবেশে বসবাস করছে। তারা এক স্থানে বেশিদিন থাকে না।’

২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে সারাদেশে একযোগে  সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। ওই দিন সকালে জঙ্গিরা দেশের ৬৩ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ঢাকার ৩৪টিসহ মোট সাড়ে ৪শ’ স্পটে প্রায় ৫শ’ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় নিহত হয় ১ জন এবং আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ।

অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট আরও জানায়, গ্রেফতার বেলাল মিয়া ওরফে বেল্লাল ওরফে রুবেলের বাবার নাম নুরুল আলম মোয়াজ্জেম। তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থানার চংড়াছড়ি এলাকায়। তার নামে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থানায় একটি যাবজ্জীবন সাজার পরোয়ানা মুলতবি রয়েছে। ঘটনার পর বেলাল আত্মগোপনে চলে যায়। সে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছদ্মনামে অবস্থান করছিল। একেক জেলায় একেক সময় থেকেছে। কখনও সাভার, কখনও নারায়ণগঞ্জ আবার কখনও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে থেকেছে। সে বিভিন্ন সময় ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে নিজের পরিচয় পরিবর্তন করেছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের অক্টোবরে রুবেল নাম ব্যবহার করে পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার কুয়াকাটা এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ নেয়। গত ১৩ জানুয়ারি মহিপুরের আলুবাজার এলাকা থেকে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট বেলালকে গ্রেফতার করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এটিইউ’র ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যে দুজন এখনও পলাতক রয়েছে, তাদের নাম ঠিকানা আমাদের কাছে রয়েছে। তারা দেশেই আছে। তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। তবে তারা বর্তমানে ততটা অ্যাক্টিভ না। নিজেদের আড়াল করে সংগঠনের কার্য‌ক্রম করার চেষ্টা করছে। এখনই তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরনো জেএমবির সদস্যরা তাদের সংগঠনের প্রতি বেশি ডেডিকেটেড ছিল। তারা কথিত আদর্শিক জায়গায় শক্তিশালী। তরুণদের টার্গেট করে রেডিক্যালাইজড করে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত করে। সাজাপ্রাপ্ত যারা এখনও বাইরে রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’