পরীবাগে পুলিশের মারধরের শিকার দুই সাংবাদিক

সাংবাদিক শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও সাজ্জাদ মাহমুদ খানরাজধানীর পরীবাগে মোটরবাইকে করে মিন্টো রোড থেকে অফিসে ফেরার পথে এক পুলিশ সদস্যের মারধরের শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। তারা হলেন, বাংলা ট্রিবিউনের ক্রাইম রিপোর্টার শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার সাজ্জাদ মাহমুদ খান। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্রাইম রিপোর্টারদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

সাংবাদিক শেখ জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোমবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকে মোটরসাইকেলযোগে পান্হপথে কর্মস্থল বাংলা ট্রিবিউন অফিসে আসছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আলোকিত বাংলাদেশের স্টাফ রিপোর্টার সাজ্জাদ মাহমুদ খান। সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে পরীবাগে যানজটে আটকে ছিলেন তারা। এ সময় বিপরীত দিক থেকে মোটরসাইকেলযোগে এক ব্যক্তি দ্রুতগতিতে এসে তার ডান পায়ে চাপা দেয়। এতে প্রতিবাদ করার সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আরও দুই তিনবার মোটরসাইকেলের পিকআপ বাড়িয়ে ঠেলতে থাকে। তার পরনে ছিল পুলিশের পোশাক।

জাহাঙ্গীর জানান, তাৎক্ষণিক এভাবে চাপা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই পুলিশ সদস্য ‘তোকে চাপা দিয়ে মাইরা ফালানো উচিত’ বলে গালাগাল করতে থাকেন। এ সময় তারা দুজন পুলিশের অপেশাদারমূলক আচরণের প্রতিবাদ করেন। অজ্ঞাত ওই পুলিশ সদস্যের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অপেশাদার আচরণ দেখে পথচারীরাও ক্ষুব্ধ হন। কিন্তু পোশাকধারী হওয়ায় কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পাননি। এই সুযোগে ওই পুলিশ সদস্য আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে লাথি মেরে দ্রুত পালিয়ে যান।
সাংবাদিক সাজ্জাদ মাহমুদ খান বলেন, পুলিশের ওই সদস্য জ্যাকেট পরে থাকার কারণে তার নাম ও পদবি জানা যায়নি। তবে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো হ-১২-৭৫০৫) লিখে রাখি। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ নাকি জনগণের বন্ধু। কিন্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ পুলিশ করছে তার মানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওই পুলিশ সদস্য আরও অমানবিক আচরণ করে। পুলিশ সদস্যের এমন আচরণ কোনোভাবেই মানা যায় না।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। আমরা রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে অজ্ঞাত ওই পুলিশ সদস্যের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছি। দুই সাংবাদিককে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। এই ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ক্র্যাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ

এদিকে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু ওই বিবৃতিতে বলেন, দুই সাংবাদিকের সঙ্গে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং মেরে ফেলার হুমকির ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটি। অবিলম্বে জড়িত ওই পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, জনগণের সেবক। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের প্রত্যেক সদস্যের মানবিক ও পেশাদার আচরণ করা উচিত। দুইজন পেশাদার সাংবাদিককে রাস্তায় এভাবে হেনস্তা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং মেরে ফেলার হুমকির ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিষয়টি উদ্বেগের। বিবৃতিতে ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ক্র্যাব নেতৃবৃন্দ।