নাগরিকদের অযথা ভোগান্তিতে না ফেলতে দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে সতর্ক করলেন হাইকোর্ট

 

হাইকোর্ট

নিয়মের কথা বলে, আইন দেখিয়ে অযথা নাগরিকদের ভোগান্তিতে না ফেলতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ (নকল শাখা) মাসুকাতে রাব্বিকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। তলব আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দুই ম্যাজেস্ট্রেট হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দাখিলের পর বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আছরারুল হক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার,  সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সরোয়ার পায়েল ও সামিউল আলম।

দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশের কপি না দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার আদালতকে বলেন, ‘আদেশের কপি দিতে আমাদের কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। আমরা সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করেছি। আমাদের কাজে কোনও গাফিলতি ছিল না। এরপরেও ভবিষ্যতে আমি এ বিষয়ে সর্তক থাকবো।’

এসময় আদালত বলেন, ‘বিচারপ্রার্থী মানুষকে বিভিন্ন দফতর না ঘুরিয়ে, আমি দেবো না, সে দেবো, এসব কথা না বলে, একজন অন্যজনের কাছে না পাঠিয়ে বিচারপ্রার্থী মানুষকে সহজে সেবা দিন। আপনি যেহেতু সাজা দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব বেশি।’ এরপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ (নকল শাখা) মাসুকাতে রাব্বিও আদেশের কপি দেওয়ার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকার বিষয়ে আদালতকে অবহিত করেন।

তখন আদালত দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘প্রক্রিয়ার কথা বলে, আইন দেখিয়ে অযথা নাগরিকদের ভোগান্তিতে ফেলবেন না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দিকে না গিয়ে নাগরিকরা যেন সহজে সেবা পান, সেদিকে নজর দিতে হবে। সেবার প্রক্রিয়াকে সহজতর করুন।’ আদালত ওই দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘আপনাদের বোঝানোর জন্য, সমস্যাগুলো জানার জন্যই আমরা ডেকেছি। এর আগে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে আমরা ডেকেছিলাম। তিনি জনবল সংকটের কথা বলেছিলেন। পরে আমরা সমস্যা সমাধানে সরকারকে বলেছি।’

হাইকোর্ট বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে যেন আদেশের কপি দেওয়া হয়, সে বিষয়ে আমরা মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে অচিরেই সার্কুলার জারি করতে বলবো। পরে আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তির আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রকল্প উপদেষ্টা লিমিটেড নামের একটি কনসাল্টিং, আর্কিটেক্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে। ওই দিনই জরিমানার টাকা আদায় করে নেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এরপর এই আদেশের কপি চেয়ে একই বছরের ৪ ও ৫ ডিসেম্বর আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও আদেশের কপি না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সে রিটের শুনানি নিয়ে আদেশের কপি সরবরাহ না করার বিষয়ে দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।