লঞ্চ দুর্ঘটনা: গ্রেফতার হয়নি কেউ, সেই সুমনের বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি (ফাইল ছবি)বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় মামলা দায়েরের পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়া ডুবে যাওয়া লঞ্চের ভেতর থেকে ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারীর বক্তব্য রেকর্ড করেছে বিআইডব্লিউটিএ’র তদন্ত কমিটি। 
মনিং বার্ডকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া ঘাতক এমভি ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক ও চালকরা সবাই পলাতক। গত ৩০ জুন এ ঘটনায় নৌ পুলিশের ঢাকা জোনের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলো এমভি ময়ূর-২-এর মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ (৩৩), মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা (৬৫), জাকির হোসেন (৩৯), ইঞ্জিন চালক শিপন হাওলাদার (৪৫), চালক শাকিল হোসেন (২৮), সুকানি নাসির মৃধা (৪০) ও সুকানি হৃদয় (২৪)।

নৌ-পুলিশের ঢাকা জোনের পুলিশ সুপার খন্দকার ফরিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই আসামিরা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের ধরতে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছি আমরা। শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।’

থানা পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে করা তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবেও আছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তারা দ্রুত লঞ্চডুবির কারণ, ক্ষয়-ক্ষতি ও দায় নিরূপণ করে মন্ত্রণালয়কে একটি সুপারিশমালা দেবেন।

এদিকে বুধবার (১ জুলাই) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রায় আধা ঘণ্টা সুমনের বক্তব্য রেকর্ড করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এছাড়া আজ সকাল থেকে তারা সদরঘাটের বিআইডব্লিউটিএ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বসে প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নেন।

তদন্তের মাঝপর্যায়ে এসে কোনও বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বক্তব্য দেওয়াটা সমীচীন হবে না বলেও মনে করেন কমিটির প্রধান নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব রফিকুল ইসলাম। তার কথায়, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। অনেকের বক্তব্য নিয়েছি। ১৩ ঘণ্টা পর বেঁচে ফিরে আসা সুমনের সঙ্গেও কথা বলেছি। শিগগিরই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।’

গত সোমবার সকালে মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে ছেড়ে আসা ময়ূর-২-এর ধাক্কায় সদরঘাটে ডুবে যায় এমএল মর্নিং বার্ড নামের একটি ছোট লঞ্চ। এতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ১৩ ঘণ্টা পর সুমন বেপারী নামে এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

তদন্ত কমিটির একজন সদস্যের দাবি, “১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারীর বক্তব্যে কিছুটা ‘অসংলগ্ন’ তথ্য পাওয়া গেছে। একেক সময় তিনি একেকরকম কথা বলছেন। ট্রমার কারণে এমন করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুমন। গতকাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবে বলে জানা গেছে।
মুন্সীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন ফল ব্যবসায়ী। সদরঘাটের বাদামতলী ফলের আড়তে ব্যবসার কাজে ফিরছিলেন। ধারণা করা হয়, ইঞ্জিন রুমে ছিলেন তিনি। ফায়ার সার্ভিসের মন্তব্য, এয়ারটাইট হওয়ার সুবাদে ইঞ্জিন রুমে পানি প্রবেশ করে না। ২৯ জুন রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে কুশন পদ্ধতির মাধ্যমে লঞ্চ ভাসানোর চেষ্টা করা হলে ইঞ্জিন রুম খুলে যায়। তখন সুমন বেরিয়ে এলে তাকে উদ্ধার করা হয়।