মানসিক হাসপাতালে মারধরে এএসপির মৃত্যুর অভিযোগ

123842046_412132179807709_6871617672494182973_nরাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড নামে একটি মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের সাত কর্মচারীর মারধরের পর সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আনিসুল করিম নামে এক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনকে আটক করেছে পুলিশ। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ, যেখানে দেখা গেছে সাত জন মিলে এএসপি আনিসুল করিমকে মারধর করছে।

সোমবার (৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনিসুল করিমের পরিবার তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভর্তি করানোর কয়েক মিনিট পরই তাকে অচেতন অবস্থায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মৃত আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক।

হাসপাতাল থেকে পুলিশ যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেছে, সেটিতে দেখা গেছে, আনিসুল করিমকে সাত জন ব্যক্তি ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে ঢুকাচ্ছে। এরপর তাকে ফেলে তিনজন তার পিঠের ওপরে, দু'জন পায়ের ওপরে এবং দু'জন হাত ধরে বেঁধে ফেলে। দু'জন কনুই দিয়ে তার পিঠ ও ঘাড়ে আঘাত করছে। মারধরের কয়েক সেকেন্ড পর অচেতন হয়ে পড়ে আনিসুল। তারপর তার মুখে পানি ছিটানো হয়, এই সময় মেঝেতে পানি দিয়ে কিছু একটা মুছতেও দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর অ্যাপ্রন পরা দুই জন নারীকে তার বুকে পাম্প করতে দেখা যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে জানান, এই ঘটনায় ইতোমধ্যে হাসপাতালের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। 

এই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ ফারুক মোল্লা।  

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৩১তম বিসিএসে পুলিশের মধ্যে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় ছিলেন এএসপি আনিসুল করিম। প্রথম জন ফাউন্ডেশন কোর্স না করায় তাকেই ব্যাচের প্রথম হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু তার ব্যাচসহ ৩৩তম ব্যাচের অনেকেই পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হলেও অজানা কারণে এই পুলিশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। এসব কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। এজন্য তাকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

পরিবারের সঙ্গে আনিসুল করিমওই কর্মকর্তা আরও জানান, আনিসুল করিম এর আগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে ছিলেন। এছাড়া তিনি নেত্রকোনা জেলা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন শোক প্রকাশ করে বলেছে, আনিসুল করিমের মতো একজন মেধাবী কর্মকর্তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ভীষণ শোকাহত ও মর্মাহত। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।