‘শিক্ষিত মানুষের শোভা পায় না, এমন কিছু লিখবেন না’

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দেশের ইমেজ সবার আগে। লেখেন, কিন্তু এরকমভাবে কিছু করবেন না, যা একজন শিক্ষিত মানুষের জন্য শোভা পায় না। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় এক আসামির জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানিতে রবিবার (৭ মার্চ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ মন্তব্য করেন।

আদালতে আসামি পক্ষের জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে কটাক্ষ ও নেতিবাচক বিভিন্ন পোস্ট ও ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করার অভিযোগে গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সিলেট কোতোয়ালি থানায় গত বছরের মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই মামলা হয়। এ মামলায় ২০২০ সালের অক্টোবরে হাইকোর্ট রুল দিয়ে সারোয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের আবেদন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত হয়। এরপর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে।   

শুনানিতে সারোয়ারের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এক বছর ধরে কারাগারে আছেন সারোয়ার। এ মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। তার হৃদযন্ত্রে চারটি স্টেন্ট পরানো আছে, স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন চাওয়া হয়েছে।’

তখন আদালত বলেন, ‘এত স্টেন্ট থাকার পরেও আপনি (আসামি) এসব করেন?’ জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তিনি (আসামি) গত ১৪ মার্চ থেকে কারাগারে আছেন। প্রায় এক বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আছেন। অভিযোগপত্র হয়নি এখনও। হাইকোর্ট মূলত মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছেন।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘ভবিষ্যতে এগুলো করলে আর ছুটবেন (জামিন) না, যতই কথা বলুক। এসব বাড়াবাড়ি করে দেশের ইমেজ যদি নষ্ট করেন, দেশের ইমেজ হলো সবার আগে।’

আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ১৮ অক্টোবর চেম্বার আদালত থেকে স্থগিতাদেশ (জামিন স্থগিত) দেওয়া হয়। তারপর পাঁচ মাস হয়ে গেছে।’

আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি সতর্ক করবেন (আসামিকে)। আবারও যদি আসে তারপরে আর বেল (জামিন) হবে না। দেশের ইমেজ আপনারা নষ্ট করে দেবেন। আমেরিকায় তো মানুষ ‘স্যাটায়ার’ করে। কিন্তু আমাদের এখানকার মতো কুৎসিতভাবে লেখে না। যেসব ভাষা লেখে, একজন শিক্ষিত মানুষ কীভাবে এসব ভাষা ব্যবহার করতে পারে? তাহলে শিক্ষার দাম কী হলো?’’

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ‘শব্দ চয়নগুলো খুবই কুৎসিত।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একদিন একজনেরটি পড়েছি।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এগুলো পড়া যায় না। শব্দ চয়ন এমন, সবার সামনে বলাও মুশকিল হয়।’

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আপনি লেখেন, কিন্তু এ রকমভাবে কিছু করবেন না, যেটি একজন শিক্ষিত মানুষের শোভা পায় না।’ পরে শুনানি শেষে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন।