বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে মুভমেন্ট পাস?

পুলিশের মুভমেন্ট পাস এখন আলোচনায়। লকডাউনে চলাচল নিয়ন্ত্রণে এই মুভমেন্ট পাস চালু করে পুলিশ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে শর্ত সাপেক্ষে দেওয়া লকডাউনে পুলিশের এই পদ্ধতি বিড়ম্বনা বাড়ানো ছাড়া আর কোনও কাজে আসেনি বলে অভিযোগ অনেকের। তবে পুলিশ বলছে, অহেতুক চলাচল বন্ধে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মুভমেন্ট পাস।

গত ১৩ এপ্রিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এই মুভমেন্ট পাস অ্যাপস উদ্বোধন করেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ। ওই অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, আইনগত ভিত্তি না থাকলেও মানুষকে সহযোগিতার জন্য এটা চালু করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল থেকে এই পাস কার্যকরে পুলিশ কাজ শুরু করে। আইন ও লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও রাখা হয়।
বাস্তবে দেখা যায়, লকডাউনে চলাচলের জন্য মুভমেন্ট পাস সংগ্রহ করতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে পুলিশের এই সাইটে। বিপুল হিটের কারণে পুলিশের সাইটটিতে জটিলতাও দেখা দেয়। এতে বেশিরভাগ মানুষই প্রয়োজনের তাগিদে ঘরের বাইরে যেতে মুভমেন্ট পাস সংগ্রহ করতে পারেননি। কেউ পাস সংগ্রহ করে ঘুরতে বেরিয়েছেন। আবার জরুরি সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ অফিসগামী অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আলোচনা সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছে এ সংক্রান্ত ভিডিওচিত্র।

সিনিয়র সাংবাদিক আমিনুর রহমান তাজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, লকডাউন চলাকালে 'মুভমেন্ট পাস' নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে পেশাজীবীদের বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থা নিরসনে 'মুভমেন্ট পাস' উঠিয়ে দেওয়া দরকার। কারণ, খোদ পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ নিজেই বলেছেন, মুভমেন্ট পাসের কোনও আইনগত ভিত্তি নেই। এটা সহযোগিতা। যেটার আইনগত ভিত্তি নেই সেটার প্রচলন আইনের কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে করেন সেই প্রশ্নটাও ওঠে।

চলাচল নিয়ন্ত্রণে মুভমেন্ট পাস কতটুকু কাজে লেগেছে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন, ঠিকমতো ব্যবহার হলে লকডাউনে জন-চলাচল নিয়ন্ত্রণে মুভমেন্ট পাসের উদ্যোগটা ভালো ছিল। এটা করা হয়েছে মানুষের চলাচল যাতে সীমিত থাকে সেজন্য। এখন সেটা কে কীভাবে করে সেটা হলো দেখার বিষয়।
চিকিৎসকসহ অফিসগামী মানুষের হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. সুলতানা আলগিন বলেন, যারা লকডাউন বাস্তবায়নে রাস্তায় কাজ করবেন তাদের আগে থেকেই জেনে নেওয়া উচিত ছিল যে ঘরের বাইরে বের হতে কাদের এই পাস লাগবে, কাদের লাগবে না। কাকে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখবেন। কাদের ব্যাপারে কঠোর হবেন। কাকে কতটুকু ছাড় দেবেন। যেহেতু তারা দায়িত্বে আছেন এটা তাদের দায়িত্ব। যারা ইমার্জেন্সি সার্ভিস দিচ্ছেন, যারা রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছেন, উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু সমন্বয় ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকার কারণে এটা বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, এই মুভমেন্ট পাস সাধারণ মানুষের খুব একটা উপকারে লাগেনি। তিনি বলেন, প্রথমত লকডাউন নিয়ে সরকারের ঘোষণা অস্পষ্ট। মানুষ এটা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। লকডাউন বলতে যেটা বুঝি সেটা হচ্ছে সবকিছু বন্ধ থাকবে। কিন্তু একদিকে অফিস-আদালত, কলকারখানা চালু রাখা হয়েছে; এসব চালু রেখে লকডাউন বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব নয়। পাশাপাশি মুভমেন্ট পাসের কথাও বলা হচ্ছে। যে কারণে লাখ লাখ মানুষ এই পাসের জন্য আবেদন করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আবার এটা না পেলেও মানুষ কাজে বেরিয়ে পড়ছে। একটা ব্যবস্থা চালু করার পর মানুষ যখন সেটা অমান্য করে তখন তার গুরুত্ব হারিয়ে যায়।

তার মতে, যেটা আইনসিদ্ধ নয় সেটা কেন সাধারণ মানুষকে মানতে বাধ্য করছে পুলিশ। এই মুভমেন্ট পাসের কার্যকারিতা আমি দেখিনি। অধিকাংশ মানুষই তো মুভমেন্ট পাস ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে।

মুভমেন্ট পাস কনসেপ্ট কতটা কাজে এসেছে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি সোহেল রানা বলেন, করোনাকালে অহেতুক মুভমেন্ট রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মুভমেন্ট পাস। এ পর্যন্ত ১৮ কোটিরও বেশিবার অনলাইনে ট্রাই করা হয়েছে এই পাসের জন্য। প্রায় জনশূন্য রাস্তাঘাটও প্রমাণ করে জন-চলাচল নিয়ন্ত্রণে এই পদ্ধতি কাজ লেগেছে। তবে, প্রকৃতিগতভাবেই নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ পছন্দ করে না মানুষ। এ অজনপ্রিয় কাজটিই পুলিশকে করতে হয়। প্রচণ্ড রোদে, ধুলায়, ধোঁয়ায় গরমে ঘেমে নেয়ে জনগণের কল্যাণের জন্যই কাজ করছে পুলিশ। তাই পুলিশকে সবাই সহযোগিতা করবে এটাই প্রত্যাশা।