পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে মামুনুল হকের যোগাযোগ: পুলিশ

পাকিস্তানি একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।

রবিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে ঢাকার শিশুমেলায় নিজের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য দেন। মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় সাতদিনের রিমান্ডে রয়েছে মামুনুল হক। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এ তথ্য পেয়েছে বলে জানান।

হারুন অর রশীদ বলেন, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনের মডেলে দেশে একটি সংগঠন দাঁড় করিয়ে সরকার উৎখাতসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন মামুনুল। হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফয়দা নেওয়ার পাঁয়তারা করছিলেন মামুনুল। রিমান্ডে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে অবস্থানে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কথার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। এছাড়া বিভিন্ন বক্তব্যের বিষয়েও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মামুনুল।

মামুনুল হকের বোন জামাইয়ের সঙ্গে জঙ্গি নেতা তাজের ঘনিষ্ঠতা

মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ নেয়ামতুল্লাহ মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি। তিনি প্রায় ১৪/১৫ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে এসে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর মামুনুল হক তার বোনকে বিয়ে দেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি তাজের সঙ্গে এই নেয়ামতুল্লাহর ঘনিষ্ঠতা ছিল। নেয়ামতুল্লাহ ওই হামলার ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছিলেন। কিন্তু মামুনুল হকের বাবা শায়খুল হাদিস আজিজুল হক বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল হওয়ায় তার জামাতাকে প্রভাব খাটিয়ে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। নেয়াতমুল্লাহ ও মামুনুল হক একসঙ্গে ২০০৫ সালে ৪০-৪৫ দিনের বেশি পাকিস্তানে ছিলেন। সেখান থেকে একটি ধর্মীয় সংগঠনকে মডেল হিসেবে এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মতবাদের মানুষকে একত্রিত করেন। বিদেশ থেকে আসা টাকা সেই সংগঠনের মাধ্যমে সরকার উৎখাতে ব্যবহার করেন।

ভায়রার মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গে মামুনুল হকের যোগাযোগ

মামুনুল হকের আপন ভায়রা কামরুল ইসলাম আনসারী জামায়াতের বড় নেতা। তার বাড়ি ফরিদপুরের টেকেরহাট। তিনি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের একজন। তার মাধ্যমেই জামায়াতের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছেন মামুনুল। অর্থাৎ মামুনুল হকের সঙ্গে জামায়াতের গোপন আঁতাত, গ্রেনেড হামলার আসামিদের যোগাযোগ ছিল। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাকিস্তানে অবস্থান করে ওই দেশের একটি সংগঠনের একটি মডেল এনে বাংলাদেশে হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি। মামুনুল কওমি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন বলেও জানান হারুন।

ভারতবিদ্বেষী ভাবাবেগ ছড়িয়ে পাকিস্তান থেকে অর্থ আনেন মামুনুল

হারুন-অর-রশীদ বলেন, ৭ দিনই আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। দুবাই, কাতার ও পাকিস্তান থেকে কোটি কোটি টাকা এনেছেন মামুনুল হক। ভারতের বাবরি মসজিদের নামে তিনি টাকা এনেছেন। ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে এসব টাকা আনা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন মসজিদে ও কওমি মাদ্রাসায় কিছু লোক তিনি ম্যানেজ করেছেন। যারা তাকে বিভিন্ন মাহফিলে ডাকেন বলেও জানান হারুন অর রশীদ।

বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম ছিল মামুনুল হকের শ্বশুরের ভায়রা

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মামুনুল হকের প্রথম শ্বশুর এবং বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর (অব) ডালিম আপন ভায়রা। আমরা এই বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি।’

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ এপ্রিল তাকে একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১৭টি মামলা রয়েছে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। এছাড়া সাম্প্রতিক সহিংসতায় দায়ের করা মামলায় আসামি মামুনুল হক।