অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অমর একুশের গ্রন্থমেলায় জাগৃতি অংশ নেবে। মেলায় স্টলও থাকবে। নতুন কিছু বই প্রকাশ করা হবে। পুরনো বইও পাওয়া যাবে। আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু গুছিয়ে ওঠার।’ তিনি বলেন, ‘দীপনের মৃত্যুতে আমাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কখনও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তবে আমার ছেলের প্রতিষ্ঠানটি যেন বেঁচে থাকে সেজন্য বাবা হিসেবে চেষ্টা করছি। দীপনের শুভাকাঙ্ক্ষীরাও তাই চায়। জাগৃতি তার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে। দীপনের হত্যার পর আমরা মামলাও করতে চাইনি। কারণ, দেশের চলমান বিচার না হওয়া সংস্কৃতি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের অনুরোধে মামলা করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এখনও মামলার তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এটাই হবে, আমি জানতাম।’
দীপনের বাবা আরও বলেন, ‘জাগৃতি আগে যে ধরনের বই প্রকাশ করত, যে ধরনের লেখকদের উৎসাহ দিত, এবারও তাই করা হবে। আমরা কোনও মৌলবাদী বা জঙ্গিবাদের কাছে হেরে যেতে পারি না।’
গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীতে দুটি পৃথক ঘটনায় প্রায় একই সময়ে চারজনের ওপর হামলা হয়। একদিকে শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিনকে, আরেকদিকে লালমাটিয়ায় প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ দুটি ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। দুটি মামলাই তদন্ত করছে ডিবি। তবে কোনও মামলাতেই তেমন অগ্রগতি নেই।
ডিবির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, দীপন হত্যা মামলায় তেমন অগ্রগতি নেই। এ জন্য জঙ্গিদেরই সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে কাউকেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
এ বিষয়ে আহমেদুর রহমান টুটুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, এ বিষয়ে কথা বলেছেন নিহত লেখক অভিজিতের বাবা অজয় রায়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিজিতের বই যে প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশ করা হতো, তার কর্ণধার দেশের বাইরে রয়েছেন। এবারের বই মেলায় তারা থাকবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। অভিজিতের কোনও নতুন বই প্রকাশের বিষয়ে এখনও কথা হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনও প্রকাশনা সংস্থা অভিজিতের বই প্রকাশের বিষয়ে আগ্রহও করেনি। নতুন কোনও পাণ্ডুলিপি বাসায় আছে কি না, তাও খুঁজে দেখব।’
অজয় রায় বলেন, ‘বই প্রকাশের বিষয়ে বন্যা ভালো বলতে পারবে। তবে, কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা চেষ্টা করব। বন্যা দেশের বাইরে রয়েছে। এ বিষয়ে এখনও আমার সঙ্গে কথা হয়নি। দেশের বাইরে অভিজিতের নতুন পাণ্ডুলিপি থাকতে পারে।’
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় শাফিউল রহমান ফারাবীসহ আটজন গ্রেফতার আছে। তবে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি এখনও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এই মামলার তদন্তে ডিবিকে সহায়তা করার কথা বলে আলমত সংগ্রহ করেছিল। তবে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও প্রতিবেদন দেয়নি এফবিআই।
/এমএনএইচ/