সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ আপাতত না কাটার নির্দেশ

আদালত অবমাননা মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত আপাতত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় গাছগুলো না কাটার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। গাছগুলোকে পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করে সেখানে গাছ না কাটার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল আদালত অবমাননার এক আবেদনে। তার ওপর শুনানিতেই এই নির্দেশনা দেন আদালত। নির্দেশনার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আগামী ২০ মে শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন।

আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১১ মে) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

এর আগে গত ৯ মে আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্টুরেন্ট স্থাপনের জন্য গাছ কাটা বন্ধ করতে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এ মামলা করেন।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে সেখানকার গাছ না কাটতে সরকার সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠায় ছয়টি সংগঠন ও এক ব্যক্তি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে এসব নোটিশ পাঠানো হয়। গত ৬ মে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এসব নোটিশ পাঠান।

নোটিশে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্টকরণ হতে বিরত থাকতে, এ উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আশ্রয়স্থল বৃক্ষগুলোকে না কাটতে এবং ইতোমধ্যে কর্তন করা বৃক্ষগুলোর জায়গায় একই প্রজাতির তিনগুণ বৃক্ষ রোপণের দাবি জানানো হয়েছিল।

এদিকে আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্টুরেন্ট স্থাপনের জন্য গাছ কাটা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আরও একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামিম আখতার ও চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানকে এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।